বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২০০ মিটার অংশ ধসে যায়। এতে সারিয়াকান্দি ও পার্শ্ববর্তী ধুনট উপজেলার অন্তত ৫০টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ২, ৫০০ মানুষ।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম সরকার জানান, যমুনার পানি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় বিপদসীমার ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর থেকেই বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তারপর ঘণ্টায় ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধির কারণে প্রবল চাপে এক সময় বাঁধটি ভেঙে যায়।
তিনি বলেন, ‘পানির স্রোত এতটাই বেশি যে ভেঙে যাওয়া স্থানটিতে এখনই কোনো মেরামত কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।’
চন্দনবাইশা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক জানান, বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে উপজেলার দক্ষিণে ধলিরকান্দি থেকে রৌহদহ পর্যন্ত প্রায় পৌনে চার কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঘুঘুমারি পয়েন্টে ভাঙন শুরু হয়। প্রথমে বাঁধটির ২০ মিটার ভেঙে যায়। একপর্যায়ে বাঁধের ২০০ মিটার বিলীন হয়ে যায়।
তিনি জানান, এরপর লোকালয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকতে শুরু করে। সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। সারিয়াকান্দির কুতুবপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রেও পানি ঢুকেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় তলিয়ে গেছে বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট। বিনষ্ট হয়েছে কয়েক শ’ একর জমিতে লাগানো উঠতি আউশ ধান ও রোপা আমন ফসল। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ২ হাজার ৫০০ মানুষ।
ঘুঘুমারি এলাকার বাসিন্দা আবু বকর সিদ্দিকের স্ত্রী হেলালী বেগম জানান, গভীর রাতে প্রবল স্রোতে তার ঘরের খাট ছাড়া সবকিছুই ভেসে গেছে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘হামার ১০টা মুরগি আছিল, দুইটা ছাগল আছিল- সব পানিত ভ্যাসা গেছে।’
একই গ্রামের ঘুটু প্রামাণিকের স্ত্রী রেহেনা আক্তার জানান, স্রোতে চাল-ডাল সবকিছুই ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এখন তার ঘরে খাবার বলতে আর কিছুই নাই।
বগুড়া-১ (সোনাতলা-সারিয়াকান্দি) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান জানান, বাঁধ ভাঙার খবর পেয়ে রাতেই তিনি সেখানে ছুটে যান। এরপর অন্তত ১০টি নৌকা দিয়ে পানিবন্দি মানুষগুলোকে নিরাপদ আশ্রয় সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়।
তিনি বলেন, ‘দুর্গত মানুষদের জন্য শুকনা খাবার বিতরণের জন্য তালিকা করা হচ্ছে। শুক্রবার বিকেল নাগাদ সবার হাতে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হবে।’
এদিকে, যমুনার বাঁধ ভেঙে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি দেখতে শুক্রবার সকালে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। দুপুরে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার হেলাল উদ্দিন, বগুড়ার জেলা প্রশাসক শফিকুর রেজা বিশ্বাস, পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক, সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মতর্কা মাজেদা ইয়াসমিনসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।