বগুড়ার আদমদীঘিতে অসামাজিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে গ্রাম্যসালিশে এক গৃহবধূকে জোরপূর্বক তালাক, এক লাখ টাকা জরিমানা (চাঁদা) আদায়, আরও দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় ওই গৃহবধূর বাবা আমিন হোসেন বুধবার আদমদীঘি থানায় স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। পুলিশ দমদমা গ্রামের দুই মাতব্বর লুৎফর রহমান নান্দু (৪০) ও স্বপন হোসেনকে (৩৫) গ্রেফতার করেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মাতব্বররা বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার দমদমা গ্রামের কৃষক ইউনুস আলীর ছেলে সুমন হোসেনের সঙ্গে প্রতিবেশী এক গৃহবধূর অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তোলেন। গত ২০ জুন রাতে গ্রামে সালিশ বৈঠক বসানো হয়। বৈঠকে নেতৃত্বে দেন সান্তাহার সদর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মাতবর মারফুল হাসান শিপলু, মিজানুর রহমান, স্বপন হোসেন, এজাফফর আলী, লুৎফর রহমান নান্দু, মঞ্জু হোসেন প্রমুখ।
ওই বৈঠকে অভিযুক্ত সুমনের অনুপস্থিতিতে তার বাবা ইউনুস আলী, তার মা এবং ওই গৃহবধূকে হাজির করা হয়। সালিশে সুমনকে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা এবং গৃহবধূকে তালাক দেয়ার রায় দেয়া হয়।
এরপর জরিমানার টাকা আদায়ের জন্য অভিযুক্ত সুমনের বাবা ইউনুস আলীর বাড়ি থেকে একটি গাভী ও ঘর থেকে ৪৩ মণ ধান বের করে আনেন মাতব্বররা। একই রাতে কাজি ডেকে গৃহবধূকে তালাক দিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। পরে আদায় করা ওই টাকা দিয়ে গ্রামে ভূড়িভোজের আয়োজন করা হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রামের সাধারণ মানুষের মাঝে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এদিকে ওই ঘটনার পর মাতব্বররা গৃহবধূর বাবার কাছে আরও দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। গৃহবধূর বাবা সান্তাহারের হঠাৎপাড়ার আমিন হোসেন বাধ্য হয়ে বুধবার ইউপি সদস্য মারফুল হাসান শিপলুসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন।
আদমদীঘি থানার ওসি আবু সায়িদ মো. ওয়াহেদুজ্জামান জানান, মাতব্বররা মিথ্যা অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে সালিশ ডেকে গৃহবধূকে তালাক দিতে বাধ্য করেছে। এছাড়া জরিমানা আদায় করে ভূড়িভোজ এবং মেয়ের বাবার কাছে আরও চাঁদা দাবি করে। বুধবার মামলা হওয়ার পর দুই মাতব্বরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।