ঢাকা, এপ্রিল ২৫, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০৮:০২:২২

ফলের নামে আমরা আসলে কী খাচ্ছি?

| ৯ কার্তিক ১৪২৪ | Tuesday, October 24, 2017

ফলের নামে আমরা আসলে কী খাচ্ছি?

হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে আপেলের গুণের কথা কে না জানে? নিয়মিত তাজা ও বিষমুক্ত আপেল খাওয়া দারুণ উপকারী। ক্যান্সার প্রতিরোধেও এর গুণ অবিশ্বাস্য। আপেল আমদানিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বিদেশি ফলের বাজারে বেশি আধিপত্য আপেলের। গত অর্থবছরে দেশে প্রায় ২৫ কোটি কেজি আপেল আমদানি হয়। এ হিসাবে প্রতিদিন দেশের বাজারে ঢুকছে প্রায় ৭ লাখ কেজি আপেল।

তবে দেখা যায়, অনেক বিদেশি ফল মাসের পর মাস পড়ে থাকলেও পচে না। সবুজ আপেল দুই টুকরো করে প্রায় এক মাস রেখে দেখা গেছে, পচন ধরেনি। নরম তবে প্লাস্টিকের মতো হয়ে গেছে। পচনশীল ফলের এমন পরিবর্তন প্রায় অসম্ভব। শুধু আপেল নয়, মাল্টা, নাসপাতি, আঙুর, আনার, পামসহ অনেক বিদেশি ফলই দীর্ঘদিনে পচে না।

রংয়েরও তেমন কোনো পরিবর্তন হয় না। সবক’টি ফলের ভেতরের অংশও ভালো আছে। বিদেশি সাগর কলারও একই অবস্থা। অথচ দেশি ফল পচে যাচ্ছে কয়েক দিনেই। দেশের আম বাজারে আসার আগে তোড়জোড় করা হয় ফরমালিন বা কেমিক্যাল মুক্ত রাখার জন্য।এর কারণ কী? প্রশ্ন উঠেছে, ফলের নামে আমরা আসলে কী খাচ্ছি?
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতিদিন দেশে গড়ে প্রায় ১৫ লাখ ৯০ হাজার কেজি ফল আমদানি হচ্ছে। সব মিলে বছরে অন্তত ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকার ফল আসছে। বিদেশি ফলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় আপেল, আঙুর, কমলা, মাল্টা, নাশপাতি ও ডালিম। ফল আমদানি তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রতিদিন দেশে গড়ে ১২ লাখ ৭০ হাজার কেজি ফল আমদানি হয়েছে। পরের বছর এর পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৭৭ হাজার কেজি, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি। সর্বশেষ অর্থবছরেও আমদানি হয়েছে প্রায় ১৬ লাখ কেজি।

মান নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠান উদ্ভিদ সংগনিরোধ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক (আমদানি, রফতানি ও পরীক্ষাগার) ও কৃষিবিদ ড. আজহার আলী বলেন, আমাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া দেশে কোনো পণ্য ঢোকে না। তবে উদ্ভিদ ও উদ্ভিদজাত পণ্যের আমদানির ক্ষেত্রে এর সঙ্গে যাতে বহির্বিশ্ব থেকে কোনো রোগ ও পোকা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে তা জোর দিয়ে দেখা হয়। কিন্তু ওই ফল আইটেমে প্রিজারভেটিভ বা অন্য কিছু আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয় না। কারণ রফতানিকারক দেশই ওই পণ্যের একটা ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেট (পিসি) দিয়ে থাকে। সেখানে প্রিজারভেটিভের সহনীয় মাত্রার কথাই উল্লেখ থাকে। কিন্তু কী পরিমাণ ব্যবহার করা হয়েছে এবং তার ম্যাক্সিমাম রিসিডিউ লিমিট (এমআরএল) সহনীয় আছে কিনা সেটা নানা সীমাবদ্ধতার কারণে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমি যতদূর জানি বিদেশি ফলগুলোয় প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয়। এ কারণেই আমদানি করা কোনো ফলে সহজে পচন ধরে না। তবে এটা ঠিক, ওই সব ফলে ব্যবহৃত প্রিজারভেটিভের মাত্রা কী পরিমাণ হলে তা মানবদেহের জন্য সহনীয় হবে এবং পার্শপ্রতিক্রিয়া মুক্ত থাকবে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত দেশে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা গবেষণা করা হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর। এর সঙ্গে ১৬ কোটি মানুষের ভোগ জড়িত রয়েছে। তাই সংশ্লিষ্টদের উচিত আমদানি পর্যায়ের ফলে কতটা মান রক্ষা হচ্ছে তা গুরুত্ব দিয়ে পরীক্ষা করা।

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)-এর সার্টিফিকেশন অব মার্কস (সিএম) উইংয়ের পরিচালক প্রকৌশলী এসএম ইসহাক আলী বলেন, বিএসটিআইএর মান যাচাইয়ে বাধ্যতামূলক ১৫৪ পণ্যের তালিকায় নেই আমদানিকৃত কোনো ফল। তাই বিএসটিআই ফিনিশড পণ্য ছাড়া কোনো উদ্ভিবদজাত পণ্য কোনো বন্দরেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে না।

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম নেতা ও এমএ সোবাহান বলেন, আমদানিকারক এলসি খোলার পর রফতানিকারক তা নিশ্চিত হয়ে মাল জাহাজিকরণের পর বন্দরে ভেড়ার বিষয়টি এনওসি পাঠিয়ে নিশ্চিকত করে। তারা একটি স্বাস্থ্য সনদও পাঠায়। কাষ্টমস ও উদ্ভিব সঙ্গনিরোধ বিভাগের কর্মকর্তারা তা দেখেই মূলত কনসাইনমেন্ট খালাসের নির্দেশ দেয়। এরপরই বিদেশি আমদানি ফল ব্যবসায়ীরা তাদের গন্তব্যে নিয়ে যায়।