ঢাকা, এপ্রিল ১৮, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১৫:৫৯:১৪

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র পুনর্বাসন না করে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা হবে না: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি হিসেবে ফের নিয়োগ পেলেন বিপ্লব বড়ুয়া সংসদ অধিবেশন উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ আপিলে দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৫১ জন নির্বাচনে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি সেনাবাহিনী চায় ইসি : পিএসও আদালত আবমাননায় বিচারক সোহেল রানার সাজার বিরুদ্ধে আপিলের রায় ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর ২১টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৪ জন গ্রেফতার : ডিএমপি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কিনা, জানালেন ইসি

প্রধান বিচারপতি বেছে নিতে কমিটি করতে পারেন রাষ্ট্রপতি

| ২ অগ্রহায়ন ১৪২৪ | Thursday, November 16, 2017

সুপ্রিম কোর্টদেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করায় দৃশ্যত প্রধান বিচারপতির পদটি শূন্য হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলেছেন, প্রধান বিচারপতির শূন্য পদ তাড়াতাড়ি পূরণ করাই প্রতিষ্ঠিত রেওয়াজ। কেননা, কোনো সাংবিধানিক পদই অনির্দিষ্টকাল শূন্য রাখা যায় না।

যদিও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রয়োজনে এক বছরও প্রধান বিচারপতির পদ খালি রাখা যেতে পারে। সাবেক দুই আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ ও আবদুল মতিন খসরু বর্তমান আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন।

এ অবস্থায় রাষ্ট্রপতি এখন প্রধান বিচারপতি নিয়োগে ২০১৫ সালে দেওয়া আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণের আলোকে কমিটি গঠন করতে পারেন। এই কমিটি যোগ্যতম ব্যক্তিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগে রাষ্ট্রপতিকে সহায়তা দিতে পারে।

আইনবিদেরা একমত এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রায় আছে যে সাংবিধানিক পদধারী কারও পদত্যাগ গ্রহণ করা বা না করার বিষয় নেই। আপিল বিভাগের একাধিক রায়ে বলা আছে, প্রধান বিচারপতি বা বিচারকগণ প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কেউ নন। অথচ সরকারি মহল বলেছে, রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতির পদত্যাগপত্র ‘গ্রহণ’ করেছেন।

আসলে প্রধান বিচারপতি যে তারিখে পদত্যাগ করেছেন, সে তারিখ থেকে দেশের প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হয়ে গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগপত্র গ্রহণকে শুধুই ‘প্রাপ্তি স্বীকার’ হিসেবে দেখতে হবে।

এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ২৬ অক্টোবর বিচারপতি মো. ইমান আলী (বর্তমানে আপিল বিভাগে) ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ পর্যবেক্ষণ দিয়েছিলেন। তাঁরা জ্যেষ্ঠতমকে প্রধান বিচারপতি করা হবে, সে বিষয়ে রিটকারীর যুক্তিতর্ক নাকচ করেন। হাইকোর্টের এই পর্যবেক্ষণ ২০১৫ সালের ৫ নভেম্বর আপিল বিভাগে বহাল থাকে।

আপিল বিভাগের রায়ের মূল লেখক (অথর জাজ) এবং বর্তমানে আপিল বিভাগের দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন লিখেছিলেন, প্রধান বিচারপতি বেছে নেওয়া রাষ্ট্রপতির বিশেষ অধিকার। তিনি এককভাবে প্রধান বিচারপতি বেছে নিতে পারেন। তাঁর লেখা রায়ে হাইকোর্টের এই মতও সমর্থিত হয় যে রাষ্ট্রপতি এমন সব ব্যক্তি ও মহলের কাছ থেকে মতামত নেবেন, যাতে তিনি উপযুক্ত ব্যক্তিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে বেছে নিতে পারেন। ফলে প্রধান বিচারপতি বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।

সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির বিষয়ে বলা হয়েছে। ১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো সংবিধানের সংশোধিত ৪৮(৩) অনুচ্ছেদে বলা হলো প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবে না। বাহাত্তরের সংবিধানে এ বিধান ছিল না। ৪৮(৩) অনুসারে, এ সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তাঁর অন্য সব দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করবেন।

কিন্তু সাবেক তিন আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ, আবদুল মতিন খসরু ও শফিক আহমেদ প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফাইল পাঠানো হয়।

তাহলে ওই বিধান কেন আনা হয়েছিল, তা জানতে চাইলে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমি সংবিধান সংশোধন কমিটিতে ছিলাম। কিন্তু কেন এটা করা হয়েছিল তা আমার মনে পড়ে না। তবে আমার আইনমন্ত্রী থাকাকালে তিনজন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পেয়েছিলেন। প্রতিবারই আমি ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। হয়তো রেওয়াজ মেনে আমরা এটা করেছিলাম।’ এ রকম একটি বিধান যে সংবিধানে এখনো আছে, সেটা জেনে তিনি অবাক হন।

রুলস অব বিজনেসের তৃতীয় তফসিলেও লেখা আছে, প্রধান বিচারপতির নিয়োগ ও পদত্যাগের নথি সরাসরি রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হবে। ১৯৯১ সালে দ্বাদশ সংশোধনীতে ওই বিধান পাসের পরে দেশে ১৪ জন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পান। বিএনপি সরকারের আমলে ৫, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ১ জন ও আওয়ামী লীগ আমলে ৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদে অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ বিষয়ে বলা আছে। অনুচ্ছেদটি বলেছে, প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে প্রধান বিচারপতি তাঁর দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বলে রাষ্ট্রপতির কাছে সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হলে ক্ষেত্রমতো অন্য কোনো ব্যক্তি অনুরূপ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত কিংবা প্রধান বিচারপতি স্বীয় কার্যভার পুনরায় গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারকের মধ্যে যিনি কর্মে প্রবীণতম, তিনি অনুরূপ কার্যভার পালন করবেন।

সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, অস্থায়ী প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালনের বিষয়ে দীর্ঘকাল ধরে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির রেওয়াজ চলমান রয়েছে। সে কারণে গত ১২ অক্টোবর আইন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘১০ নভেম্বর প্রধান বিচারপতির ছুটি পর্যন্ত’ অথবা ‘প্রধান বিচারপতির পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত’ আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারক বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে দেশের প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনের দায়িত্ব প্রদান করেছেন।

প্রজ্ঞাপন বিশ্লেষণে দেখা যায়, কর্মে প্রবীণতম বিচারককে যে দুটি শর্তে প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনের ম্যান্ডেট দেওয়া ছিল, সেটা শেষ হয়েছে। কারণ, ১০ নভেম্বর পার হয়েছে। প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করায় তাঁর স্বীয় কার্যভার গ্রহণের শর্ত অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

বঙ্গভবনের মুখপাত্র, আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেল জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতির পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন।

তবে প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য করে নতুন করে আর কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে গতকাল সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির পদত্যাগপত্র প্রেরণ বা তা গ্রহণ করা-সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে সরকারিভাবে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।’

এ প্রেক্ষাপটে ধারণা করা হচ্ছে বর্তমান শূন্য পদে ২২তম প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে বিলম্ব হতে পারে। এখন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি বেছে নিতে একটি কমিটি গঠন করতে পারেন। বাস্তবে প্রধানমন্ত্রী না চাইলে এ রকম কোনো কমিটি হবে না। বিচারঙ্গনেও এ রকম কোনো দাবি শোনা যায়নি। তবে আইনজ্ঞ ও বিশিষ্টজনেরা বলছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে না হলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে এই কমিটি হতে পারে।

২০১০ সালে প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জনস্বার্থে করা ওই রিট এবং এর রায়ে আদালত কী বলেছিলেন, সে বিষয়েও সংশ্লিষ্ট অনেকের কাছে তথ্য পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া পর্যবেক্ষণকে সব সময় ঐচ্ছিক না ভেবে বাধ্যতামূলক বিবেচনারও নজির আছে।

 জ্যেষ্ঠতমকে ডিঙিয়ে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হবে—এ আশঙ্কায় ২০১০ সালে রিটকারী আইনজীবী হাসান এম এস আজিম তাঁর মামলাটি দাখিল করেন। রিটে জ্যেষ্ঠতার নীতি লঙ্ঘন করে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ কেন বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পরিপন্থী হবে না, সে মর্মে রুল চাওয়া হয়।

হাসান এম এস আজিম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাইকোর্ট বেঞ্চ আমার রিট আবেদনের ওপর কোনো রুল জারি না করলেও শুনানির জন্য গ্রহণ করেছিলেন। তবে শর্ত ছিল যে এ-সংক্রান্ত শুনানির গোপনীয়তা বজায় রাখতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘তিন-চার দিন ধরে শুনানি হয়েছিল। কিন্তু এর খবর কোথাও প্রকাশ হয়নি। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল (সিপি) করেছিলাম। কিন্তু হাইকোর্ট জ্যেষ্ঠতার নীতি অনুসরণে আমার নিবেদন অগ্রাহ্য করেন। তাই এর বিরুদ্ধে আপিল করেছিলাম।’

২০১৫ সালের ৫ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ওই আপিল খারিজ করেন। বর্তমানে আপিল বিভাগের দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন তাঁর রায়ে লিখেছেন, রিটকারীরা মনে করেন, রাষ্ট্রপতি জ্যেষ্ঠতমকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিতে বাধ্য। কখনো এর ব্যত্যয় ঘটতে পারে যদি তাঁকে ডিঙানোর সপক্ষে কোনো ‘নির্দিষ্ট ও বৈধ কারণ’ থাকে। হাইকোর্ট বিভাগ ওই যুক্তি অগ্রাহ্য করেন।

রিট আবেদনকারীরা প্রধান বিচারপতি নিয়োগে একটি জুডিশিয়াল কমিশন গঠনকে বাধ্যতামূলক বলে নিবেদন করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে বিচারপতি মো. ইমান আলী লিখেছিলেন, ‘আমরা এটি বাধ্যতামূলক করে দিতে পরি না। কিন্তু রাষ্ট্রপতি চাইলে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করতে গিয়ে যে কারও মতামত নিতে পারেন এবং চাইলে সংবিধানের আওতায় একটি কমিশন বা কমিটি করতে পারেন। আপিল বিভাগ তা সমর্থন করেন।’

বর্তমানে আপিল বিভাগের দ্বিতীয় কর্মে প্রবীণ বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন লিখেছিলেন, রিটকারীদের মতে আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারকই প্রধান বিচারপতি হিসেবে সবচেয়ে যোগ্য। যোগ্যতম বলেই কর্মে প্রবীণতমকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি করা হয়। কিন্তু হাইকোর্ট তা নাকচ করে বলেছেন, এটা শুধু সুবিধাজনক বলে সাময়িক শূন্যতা পূরণে এমন বিধান করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি নিয়োগে রাষ্ট্রপতির বিশেষ অধিকার রয়েছে। কোনো কারণে জ্যেষ্ঠতমকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ না করলে রাষ্ট্রপতিকে তাঁর কারণ বলার দরকার নেই।

বিচারপতি মো. ইমান আলী বর্তমানে আপিল বিভাগের তৃতীয় জ্যেষ্ঠ বিচারক। হাইকোর্টের ওই রায়ে তিনি বলেছিলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের যুক্তি হলো প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতমকে কেন ডিঙানো হলো সেটা যদি রাষ্ট্রপতি জনসমক্ষে প্রকাশ করেন তাহলে তাঁকে কলঙ্কিত করা হবে। সুতরাং কারণ প্রকাশ করা ঠিক হবে না। হাইকোর্ট অ্যাটর্নি জেনারেলের ওই মত সমর্থন করেন। আপিল বিভাগেও তা সমর্থিত হয়। আপিল বিভাগ অবশ্য এই মামলায় হাইকোর্টের সম্পূর্ণ পর্যবেক্ষণকে আইনানুগ ও যথাযথ ঘোষণা করেন।

প্রধান বিচারপতি বাছাই প্রক্রিয়া-সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের ওই পর্যবেক্ষণ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে সাবেক আইন ও বিচারমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, ‘আমি মনে করি, বিরাজমান পরিস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক কোনো কমিটি করা হলে তাতে প্রধান বিচারপতির নিয়োগ প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে। তবে রাষ্ট্রপতি যোগ্যতমকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিতে অনানুষ্ঠানিকভাবে উপযুক্ত ব্যক্তি ও কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে গোপনে মতামত নিতে পারেন।’ অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে মাত্র ছয়বার জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। এর অর্থ হলো আমরাও প্রধানত জ্যেষ্ঠতার নীতি অনুসরণের দিকেই আছি।’

আইন মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু মনে করেন, রাষ্ট্রপতি দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে শতভাগ নিরপেক্ষতা বজায় রেখে তাঁর বিচক্ষণতায় যোগ্যতমকেই বেছে নেবেন। এর মাধ্যমে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে।

প্রসঙ্গত, ভারত ও পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট অব্যাহতভাবে জ্যেষ্ঠতমকেই প্রধান বিচারপতি নিয়োগের শক্তিশালী রেওয়াজ গড়ে তুলেছে। যখনই এই প্রশ্ন আদালতের সামনে গেছে, তখনই বলা হয়েছে জ্যেষ্ঠতমকেই নিতে হবে। ভারতের ৭০ বছরের ইতিহাসে ৪৫ জন প্রধান বিচারপতি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৯৭৩ সালে চারজনকে ডিঙিয়ে বিচারপতি এম এন রায়কে এবং ১৯৭৭ সালে জরুরি অবস্থায় ইন্দিরা গান্ধী জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি খান্নাকে ডিঙিয়ে এম এইচ বেগকে প্রধান বিচারপতি করেছিলেন। ১৯৭৭ সালের পরে আর ব্যত্যয় হয়নি। ১৯৯৩ সালে ‘সেকেন্ড জাজ’ মামলায় ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের নয় সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ বলেছেন, প্রধান বিচারপতি কে হবেন, সেটা সুপ্রিম কোর্টই ঠিক করে দেবেন।