ঢাকা, এপ্রিল ২০, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১৯:৪৮:৩৯

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

একীভূত হতে চাওয়া ব্যাংকের সম্পদের দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হবে টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ নেই : ওবায়দুল কাদের বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের ঈদ যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

প্রধান বিচারপতির অভিশংসন চেয়ে প্রেসিডেন্টকে বিচারপতি মানিকের চিঠি

| ৩০ ভাদ্র ১৪২২ | Monday, September 14, 2015

এস কে সিনহা- সামসুদ্দিন চৌধুরী

১৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্রনাথ কুমার সিনহাকে (এস কে সিনহা) অভিশংসন করার আবেদন জানিয়ে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন আপিল বিভাগের বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।

এস কে সিনহার বিরুদ্ধে সংবিধান লংঘন, শপথভঙ্গ ও অসদাচরণের অভিযোগ এনে আজ (রোববার) বিকেলে বিচারপতি মানিক তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের কাছে চিঠিটি পৌঁছান। ওই চিঠির অনুলিপি প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, আইনমন্ত্রী ও সুপ্রিম কোর্টের সব বিচারপতির কাছে পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে আমার সর্বশেষ কর্মদিবস ১৭-০৯-১৫ ইং তারিখ। আমি মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয়কে আমার পেনশন কার্যক্রম বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসকে নির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ করলে, মাননীয় প্রধান বিচারপতির নির্দেশে রেজিস্ট্রার জেনারেলের স্বাক্ষরে বিগত ২৫-০৮-২০১৫ ইং তারিখে আমাকে অবহিত করা হয় যে, ‘সকল পেন্ডিং রায় না লেখা পর্যন্ত আমার পেনশন কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে না।’ উক্ত পত্রের প্রেক্ষিতে আমি প্রধান বিচারপতি মহোদয় বরাবর বিগত ১-০৯-২০১৫ তারিখে এক পত্র প্রেরণ করি। যাহাতে উল্লেখ করি যে, ‘মাননীয় প্রধান বিচারপতির উক্তরূপ আদেশ প্রদান করার কোনো আইনগত কর্তৃত্ব নাই। এবং অতীতে অবসরে যাওয়া সকল মাননীয় বিচারপতিগণই অবসরে যাওয়ার অনেক পরেও রায় লিখিয়াছেন। এবং আমার প্রতি প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের আচরণ বৈষম্যমূলক ও বিদ্বেষপূর্ণ।’ অতঃপর তিনি রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে বিগত ০২-০৯-২০১৫ ইং তারিখের পত্রে আমার পেনশনবিষয়ক কার্যক্রম শুরু করার বিষয়টি আমাক অবহিত করেন এবং উক্ত পত্রে আমার অবসরে যাওয়ার পূর্বে যে সমস্ত মামলার রায় লেখা সম্ভব হইবে না সে সমস্ত মামলার নথি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ফেরত প্রদানের অনুরোধ করেন এবং ‘ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী হিসেবে মামলার রায় না লিখে বিদেশ চলে যেতে পারি মর্মে সংশয় প্রকাশ করেন।’ যা কল্পনাপ্রসূত ও অলীক। উক্ত পত্রের প্রেক্ষিতে ৮-৯-২০১৫ ইং তারিখে আমি মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করি যে, ইতিপূর্বে অবসরে যাওয়া কোনো বিচারপতিকেই নথি ফেরত দেওয়ার জন্য কখনো বলা হয়নি। প্রধান বিচারপতি হিসেবে আমার প্রতি তাহার আচরণ বৈষম্য ও জিঘাংসামূলক। তাহার এইরূপ আদেশ আমার স্বাধীন বিচারকার্যে হস্তক্ষেপের শামিল ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান-এর ৯৪ (৪) আর্টিকেলের পরিপন্থী। এবং তিনি সুস্পষ্টভাবে সংবিধানের ৯৪ (৪) আর্টিকেল সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করেছেন।”

চিঠিতে আপিল বিভাগের এই বিচারপতি আরো অভিযোগ করে জানান, আপিল বিভাগের একটি বিচারিক বেঞ্চ থেকে তাঁকে সরিয়েও দেয়া হয়। ব্যক্তিগত বিরাগের বশবর্তী হয়ে প্রধান বিচারপতি এসব করছেন বলে দাবি করে তাঁর এই আচরণ অভিশংসন যোগ্য বলেও মত দেন শামসুদ্দিন চৌধুরী।

এসবের থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা যেকোনো মামলায় অনুরাগ ও বিরাগের ঊর্ধ্বে থেকে বিচারকাজ পরিচালনা করতে অক্ষম বলেও চিঠিতে মত দিয়েছেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী। তাঁর এসব আচরণ অভিশংসনযোগ্য হওয়ায় তা বিবেচনা করতে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী।

এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের নামে শামসুদ্দিন চৌধুরীকে তাঁর পেনশনবিষয়ক কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠির জবাবে গত ৮ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি বরাবর একটি চিঠি লেখেন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে দিয়ে একজন আপিল বিভাগের বিচারপতিকে চিঠি দেওয়া শুধু অশোভনীয় ও অসৌজন্যমূলকই নয়, সহকর্মী বিচারকগণের প্রতি চরম হেয় ও অবমাননার বহিঃপ্রকাশ।’ এর মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের সব বিচারপতিদের অসম্মান করেছেন বলেও ওই চিঠিতে উল্লেখ করে শামসুদ্দিন চৌধুরী।

এদিকে, বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীকে সুপ্রিম কোর্ট বারের পক্ষ থেকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেয়া হবে কি না এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেছেন বিএনপি ও আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা।

আজ রোববার বেলা সোয়া ১টায় বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেয়া হবে কি না, সে ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট বারের উদ্যোগে এক সাধারণ সভার আয়োজন করা হয়। ওই সভায় এই বিচারপতিকে সংবর্ধনা না দেয়ার রেজুলেশন পাস করার সময় আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা দ্বিমত পোষণ করেন এবং সভার ব্যানার ছিনিয়ে নিয়ে যান।

সভা শেষ হতে না হতেই দুপুরে বিদায় সংবর্ধনা নিয়ে মিছিল বের করেন বিএনপি ও আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা। বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা বারের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ শেষে বারের সভাপতির কক্ষের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।

উল্লেখ্য, আগামী ১ অক্টোবর অবসরে যাবেন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী। তবে ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শুরু হওয়ায় ১৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার তার শেষ কর্মদিবস।