ঢাকা, এপ্রিল ২০, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১১:১৬:০৪

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র পুনর্বাসন না করে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা হবে না: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি হিসেবে ফের নিয়োগ পেলেন বিপ্লব বড়ুয়া সংসদ অধিবেশন উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ আপিলে দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৫১ জন নির্বাচনে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি সেনাবাহিনী চায় ইসি : পিএসও আদালত আবমাননায় বিচারক সোহেল রানার সাজার বিরুদ্ধে আপিলের রায় ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর ২১টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৪ জন গ্রেফতার : ডিএমপি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কিনা, জানালেন ইসি

পিডিবির উপসহকারী প্রকৌশলী কতৃক স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে খুঁচিয়ে স্ত্রীকে নির্যাতন!

| ১৩ কার্তিক ১৪২২ | Wednesday, October 28, 2015

তাসনুবা রেজা নামের ওই গৃহবধূ এখন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন

যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে তার কাটার যন্ত্র (প্লায়ার্স) ও স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে পিডিবির এক উপসহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। তাসনুবা রেজা নামের ওই গৃহবধূ এখন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় মামলা না নিয়ে বরং ‘খারাপ মেয়ে’ বলে আটক করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। যদিও পুলিশ তা অস্বীকার করে বলেছে, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হওয়ায় আইনি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

তাসনুবা রেজা কুষ্টিয়া শহরের আমলাপাড়ার বাসিন্দা সোহেল রেজার বড় মেয়ে (২০)। কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর স্বামী লাহরী খান একই জেলার কুমারখালী উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে পিডিবির নওগাঁ অফিসে কর্মরত।
হাসপাতালের চার নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন তাসনুবা রেজা আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, দেড় বছর আগে লাহরী খানের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বাবার কাছ থেকে জমি কেনার টাকা না নেওয়ায় এবং মোবাইলে (মুঠোফোনে) ফেসবুক ব্যবহার করায় গত শুক্রবার তাঁর স্বামী তাঁকে প্লায়ার্স ও স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্যাতন করেন।
তাসনুবা রেজার ভাষ্য, লেখাপড়ার জন্য তিনি বেশির ভাগ সময় বাবার বাড়িতে থাকেন। মাঝেমধ্যে স্বামীর কাছে নওগাঁয় যেতেন। যখনই যেতেন তখনই টাকার জন্য তাঁকে মারধর করা হতো। এ ছাড়া মোবাইলে ফেসবুক ব্যবহার করলে রেগে গিয়ে বেশি মারধর করা হতো। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি নওগাঁ শহরের দয়ালের মোড় এলাকায় ভাড়া বাসায় স্বামীর কাছে যান। ওই বাসায় তাঁরা দুজনই থাকেন। বুধবার (২১ অক্টোবর) রাতে ফেসবুকে একটি ছবি আপলোড করায় পরদিন (বৃহস্পতিবার) রাতে তাঁর স্বামী বকাঝকা করেন। শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) সকালে ঘুম থেকে ডেকে তুলে স্বামী তাঁকে অতর্কিত মারধর শুরু করেন। এরপর বাসায় থাকা প্লায়ার্স, জানালার পর্দা লাগানোর পাইপ, মোটরসাইকেলে ব্যবহৃত লম্বা লগ তালা ও স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে আঘাত করে এবং খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাঁর ওপর নির্যাতন চালান। দুই পায়ের পুরো অংশ ও দুই হাতের চামড়ায় প্লায়ার্স দিয়ে টান দিয়ে নির্যাতন করেন। চিৎকার ও কান্না করলে মেরে ফেলার হুমকি দেন। ওই দিন দুই দফায় নির্যাতন করেন লাহরী খান। সন্ধ্যার দিকে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা গিয়ে তাঁকে বাসা থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। তবে এ পুলিশ কর্মকর্তারা কীভাবে খবর পেয়েছেন সে ব্যাপারে কিছু জানেন না তিনি।

রক্ত জমাট বাঁধা হাতের অংশ। ছবি: তৌহিদী হাসান, কুষ্টিয়া

হাসপাতালে তাসনুবা রেজার বাবা সোহেল রেজা দাবি করেন, মেয়ের বিয়েতে জামাই লাহরী খানকে পাঁচ লাখ টাকা দেন তিনি। বিয়ের কয়েক মাস পর নওগাঁ শহরে জমি কেনার জন্য আরও টাকা চায় জামাই। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মেয়ের ওপর মারধর শুরু করেন তিনি। সোহেল রেজা বলেন, ২৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় লাহরীর ফোন করে জানান, তাঁর মেয়ে থানায় আছেন। রাতেই স্বজনদের নিয়ে তিনি নওগাঁ যান। থানায় সে সময় লাহরী ও পুলিশ কর্মকর্তারা সাদা কাগজ ও তালাক নামায় স্বাক্ষর নিয়ে তাঁদের থানা থেকে বের করে দেন। এরপর মেয়েকে হাসপাতালে নিতে চাইলে স্থানীয় ৪-৫ যুবক বাধা দেন। পরে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে ভোর রাতে মেয়েকে নিয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক তাপস কুমার সরকার বলেন, তাসনুবা রেজার পা ও হাতে রক্ত জমাট বেঁধে দগদগে ক্ষত হয়ে গেছে। ভোঁতা অস্ত্র দিয়ে তাকে মারধর করা হয়েছে। এ ছাড়া কোনো বস্তু দিয়ে শরীরে খোঁচানো হয়েছে। সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে তাঁর পরিবার ঢাকায় নিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন।
তাসনুবা রেজা আরও অভিযোগ করেন, নওগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকিরুল ইসলাম ভয় দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে সাদা কাগজ ও তালাক নামায় স্বাক্ষর নেন। স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানালে ‘খারাপ’ মেয়ে বানিয়ে মামলা দিয়ে চালান দেওয়ার হুমকি দেন।
এ ব্যাপারে নওগাঁ থানার ওসি জাকিরুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাসনুবা রেজার সঙ্গে এক ছেলের ‘পরকীয়ার’ সম্পর্ক ছিল। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ওই ছেলেসহ ওই মেয়েকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল। পরে উভয় পরিবারের সমঝোতায় ওই নারীকে তাঁর বাবা বাড়ি নিয়ে গেছেন।’ শরীরে আঘাতের চিহ্নের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘তাসনুবা রেজার শরীরে ছোটখাট কিছু আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। তবে দুই পরিবারের মধ্যে সমঝোতা হওয়ায় আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় নাই।’
এ ব্যাপারে তাসনুবা রেজার বাবা বলেন, থানায় গিয়ে তিনি কোনো ছেলেকে পাননি। এ ছাড়া নওগাঁ থানা কোনো অভিযোগ না নেওয়ায় কুষ্টিয়ার আদালতে একটি মামলা দায়েরের চেষ্টা চলছে।
লাহরী খানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় জানার পর ওপাশ থেকে বলা হয়, ‘লাহরী খান বাইরে গেছেন। আমি তাঁর কলিগ বলছি। কখন আসবে জানি না। আপনি পরে যোগাযোগ করেন।’