সাতক্ষীরা : ট্রলার থেকে নামতেই এক ঝাঁক বানর ছুটে এসে স্বাগত জানাবে আপনাকে। পরপরই দেখতে পাবেন কিছু হরিণ আপনার আশেপাশেই ঘোরাঘুরি করছে। এছাড়াও আছে গেওয়া, গরান, বাইন, পশুর, গোলপাতা, হোগলাপাতাসহ নানান প্রজাতির বৃক্ষ। রয়েছে কুমির, মদন টাকসহ হাজারো প্রাণবৈচিত্র্য। আর এসব উপভোগ করতে শীতের শুরু থেকেই পর্যটকমুখর হয়ে পড়েছে সুন্দরবনের কলাগাছিয়া ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার। সুন্দরবন সংলগ্ন জেলা সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটক আসতে শুরু করেছে এখানে। মেতে উঠেছে সুন্দরবনের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগে।
কলাগাছিয়া ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের ওয়াচ টাওয়ারে উঠে যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। কেউ বানরের সাথে খেলায় মত্ত, কেউবা ছবি কিংবা সেলফি তুলেই হারিয়ে যেতে চান প্রকৃতির মাঝে।
সাতক্ষীরা থেকে সুন্দরবন দেখার একটা বিশেষত্ব আছে আর তা হলো এখানে বাস থেকে নেমেই স্বল্প খরচে সুন্দরবন দেখা যায়। সাতক্ষীরা শহর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে চুনা নদীর তীরে মুন্সীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড। এ পাশে বাসস্ট্যান্ড, ওপারে সুন্দরবন।
রাজশাহী থেকে সুন্দরবন ভ্রমণে আসা কলেজ শিক্ষক জিয়াউল হক জানান, ছেলেমেয়েদের নিয়ে সুন্দরবন ভ্রমণের স্বপ্ন ছিল অনেকদিনের। এবার তা পূরণ হলো। অন্যান্য জায়গার তুলনায় সাতক্ষীরা অংশের সুন্দরবন দেখা সহজ। এখানকার ব্যবস্থাপনাও ভালো। রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে সুন্দরবন ভ্রমণে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সুন্দরবন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এ দিয়ে ছয় বার আসা হলেও প্রত্যেকবার নতুন করে দেখি সুন্দরবনকে।
শ্যামনগরের নীলডুমুর ট্রলার চালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম বলেন, বাংলাদেশের যে পাঁচটি জেলা নিয়ে সুন্দরবন, তার মধ্যে সাতক্ষীরা দিয়ে কেবল বাস থেকে নেমেই সুন্দরবন দেখা যায়। দেশের যেকোনো এলাকা থেকে বাসযোগে শ্যামনগর, মুন্সীগঞ্জে নামলেই সামনে পড়ে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। আর একটু ভেতরে যেতে চাইলে লোকালয় থেকে একেবারে কাছাকাছি কলাগাছিয়া। খুব অল্প খরচে ট্রলারে যাওয়া যায় কলাগাছিয়া। শীতের শুরু থেকেই পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন।
এদিকে, সুন্দরবন ভ্রমণে আসা দর্শনার্থীদের জন্য নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে চুনা নদীর তীরে সুন্দরবনের কোলে প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে গড়ে তোলা আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টার। বিকেলের সময়টা ভালোই কাটবে সেখানে। কিভাবে যাবেন :
রাজধানী ঢাকা থেকে সরাসরি শ্যামনগরের বাস পাওয়া যায়। অথবা দেশের যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো মাধ্যমে শ্যামনগর পৌঁছে লোকাল বাস বা অন্য যেকোনো যানবাহনে চড়ে মুন্সীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। মুন্সীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছুলেই রাস্তার পাশের দোকানগুলোর পিছনে তাকালেই চোখে পড়বে সুন্দরবন।
থাকা খাওয়া ভ্রমণের জন্য পাবেন বেশ কয়েকটা রিসোর্ট। থাকতে পারেন ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনায়ও। মুন্সীগঞ্জ থেকে সুন্দরবনের ভেতরে কলাগাছিয়া ইকো ট্যুরিজম সেন্টারে যেতে ট্রলার ভাড়া পড়বে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। যদি আরেকটু এগিয়ে নীলডুমুর ঘাট থেকে ট্রলার নেওয়া যায়, খরচ হবে অর্ধেক।