ঢাকা, এপ্রিল ২৪, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১০:০৪:০০

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

একীভূত হতে চাওয়া ব্যাংকের সম্পদের দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হবে টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ নেই : ওবায়দুল কাদের বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের ঈদ যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

পদ্মা-মেঘনা পাড়ে স্বাগতম জননেত্রী শেখ হাসিনা

| ১৮ চৈত্র ১৪২৪ | Sunday, April 1, 2018

কচুয়া ডাক: ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর। প্রাচীন কাল থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য আর প্রাকৃতিক সৌন্দের্যের অনন্য স্থান আমদের প্রিয় চাঁদপুর।পদ্মা-মেঘনা, ধনাগোদা আর ডাকাতিয়ার স্বচ্ছ জলে বিধৌত সমৃদ্ধ জনপদ এটি। এই মাটিতে যেমনি অনেক কীর্তিমানের নাম মিশে আছে, তেমনি অনেক দেশবরেণ্য ব্যক্তি বর্গের স্মৃতি চিহ্ন ও জড়িয়ে রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এ জেলার সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ছোট বেলার স্মৃতির বর্ণনা পাওয়া যায় তাঁরই কণ্ঠে। পৈত্রিক নিবাস দেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায়, জলপথে চাঁদপুরের পাশ দিয়ে ঢাকায় আসা যাওয়ার সময় এসব স্মৃতিকথার জন্ম হয়েছে।

চাঁদপুরকে ঘিরে তাঁর বাল্যকালের এমন সব স্মৃতিকথা তিনি একটি অনুষ্ঠানে দেশবাসীর সামনে বর্ণনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘স্টিমারে করে ঢাকায় আসা যাওয়ার পথে চাঁদপুরের কাছাকাছি আসলে আমরা অপেক্ষায় থাকতাম কখন পদ্মা-মেঘনার কালো এবং সাদা পানি একত্রে মিশে যাওয়া দেখবো। শুধু ইলিশ মাছ না, চাঁদপুরের রসগোল্লাও অনেক মজার ছিলো। চাঁদপুর ঘাটে ভিড়লে মাটির হাঁড়িতে রসগোল্লা পাওয়া যেত, সেটা আমরা খেতাম। স্টীমার ঘাটে পেট চুক্তি খাবারের ব্যবস্থা ছিলো। তবে স্টীমার ওয়ালারা খুব চালাকি করতো, বলতো পেট চুক্তি খান, খেতে বসলে স্টীমার একটা হুইসেল দিতো, তখন সবাই আধা পেট খেয়েই দৌড় মারতো। ছোট বেলার এসব কাহিনী আমার মনে আছে’। সেদিনের সেই অনুষ্ঠানে তিনি বেশ উচ্ছ্বাস ভরে তাঁর স্মৃতিকথা সকলের জন্য তুলে ধরেছিলেন। যা চাঁদপুরবাসী হিসেবে আমাদেরকে অনেক আনন্দ দিয়েছিল। শুধু তাই নয়, স্মৃতিচারণের এক পর্যায়ে চাঁদপুরকে তিনি ‘চাঁদের হাট’ নামেও আখ্যায়িত করেন। সেই ‘চাঁেদর হাটের” অধিকারী মেঘনা পাড়ে অবস্থিত চাঁদপুর জেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আগমনে তাঁকে এবং তাঁর সফর সঙ্গীদের জানাই শুভেচ্ছা ও স্বাগতম। প্রধানমন্ত্রী তাঁর নিয়মিত কাজের ধারাবাহিকতায় যখন যে এলাকায় সফর করেন, তখনি সে এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়ার পাশাপাশি ঐসব এলাকার মানুষের বাড়তি কিছু চাওয়ার সুযোগ হয়। চাঁদপুরে তাঁর আগমনকে ঘিরে উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ জেলাবাসীরও কিছু প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। ইতিপূর্বে চাঁদপুরে তাঁর বেশ কিছু উন্নয়ন কাজ দৃশ্যমান এবং কিছু কাজ চলমান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের প্রেস উইংয়ের তথ্য অনুযায়ী আমরা জানতে পেরেছি, প্রধানমন্ত্রী তাঁর এ সফরে চাঁদপুরবাসীর জন্য ৪৮টি উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে আসছেন। যার মধ্যে তিনি ২৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ২৫ট উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। চাঁদপুরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য সেবা, সড়ক-মহাসড়ক, আশ্রয়ন প্রকল্প, অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান, কৃষি ও সেচ প্রকল্প, সামাজিক নিরাপত্তাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রের এসব উন্নয়ন কার্য চাঁদপুর জেলাকে আরো বেশি পরিমানে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টারা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘোষিত এসব উন্নয়ন প্রকল্প ছাড়াও চাঁদপুরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন জরুরী। নাগরিক সমাজ থেকে এসব উন্নয়ন কার্য বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করা হচ্ছে। যার মধ্যে, বাস্তবায়নাধীন চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ ও অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ দৃশ্যমান করানো, চট্রগ্রাম-খুলনা ও মংলা রুটে ব্যাপক পণ্য পরিবহন ও যাত্রী যাতায়াতের লক্ষে চাঁদপুর-শরীয়তপুর ২য়/৩য় পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ, মেঘনার অব্যাহত ভাঙ্গন থেকে নদী সিকস্তি চাঁদপুরবাসী তথা বড় স্টেশন, মোলহেড ও প্রচীন ব্যবসায় নগরী পুরান বাজারকে রক্ষা করতে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের মাধ্যমে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা, তিন নদীর সংযোগ স্থল (মোহনা) কে কেন্দ্র করে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের চাঁদপুরকে পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণা, আমিষের উৎস তথা খাদ্য হিসেবে রূপালী ইলিশের ব্যবহার, বাজারজাতকরণ ও রপ্তানীতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানো, ঢাকার সাথে চাঁদপুরের রেল সংযোগ স্থাপন, চাঁদপুর নদীবন্দরকে আধুনীকায়ন করা, প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাঁদপুর সরকারি কলেজকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা, মডেল পৌরসভা হিসেবে পরিচিত ‘চাঁদপুর পৌরসভা’কে সিটি কর্পোরেশন হিসেবে মর্যাদা দেয়া প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। চাঁদপুরবাসী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনেক বেশী কৃতজ্ঞ যে, তিনি ২০০৯ সালে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে এসে মেঘনার ভাঙ্গন থেকে চাঁদপুর-হাইমচরবাসীকে রক্ষা করার জন্য সাড়ে ৩’শ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ করে দেন। আমরা বিশ্বাস করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবারের সফরে চাঁদপুরবাসীর দীর্ঘ দিনের আশার পূর্ণতা দিতে উল্লেখিত উন্নয়ন কার্য সমূহ ক্রমান্বেয়ে বাস্তবায়ন করেবেন। প্রায় ৮ বছর পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কণ্যা, বিশ্ব রাজনীতিতে শান্তির মডেল, মাদার অফ হিউম্যানিটি খেতাবে ভূষিত, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চাঁদপুরে আসছেন। এর আগে ২০১০ সালে তিনি ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র সহ অনেকগুলো উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করতে চাঁদপুরে এসেছিলেন।

এ সফরে একই দিনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চাঁদপুরের দুটি স্থানে পৃথক দুটি অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন। ঐদিন নির্ধারিত সময়ে তিনি চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার চরভাঙ্গায় বাংলাদেশ স্কাউটস এর ৬ষ্ঠ জাতীয় কমডেকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিকালে চাঁদপুর স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে বিশাল জনসভায় বক্তব্য রাখবেন। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকে কেন্দ্র করে চাঁদপুরসহ পাশ্ববর্তী কয়েক জেলার দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়তি উৎসাহ-উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাঁর আগমনকে সফল ও সাফল্যম-িত করতে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ও জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। পুরো শহরকে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার আওতায় আনা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার পাশাপাশি সাজানো হয়েছে নানা রঙে। বাস স্ট্যান্ড, রেল ইস্টেশন ও নৌ ঘাটে নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের শহরে সু-শৃঙ্খল ভাবে শহরে প্রবেশের জন্য সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

চাঁদপুর জেলার ৫টি নির্বাচনী আসন হতে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রতিনিধি জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে। তাঁরা সবাই জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের বাহক হিসেবে এ এলাকার সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন কার্যকে প্রসারিত করে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সু-চিন্তিত দিক নির্দেশনার মাধ্যমে তাঁরা সাধারণ মানুষের কাছে উন্নয়ন বার্তাসহ আওয়ামীলীগের প্রকৃত রাজনৈতিক দর্শনটি পৌছে দেয়ার কাজ করে যাচ্ছেন। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফর ভোটের রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে সব কিছুর পাশাপাশি জনসভায় সংসদ সদস্য ও জেলা নেতৃবৃন্দ তাঁদের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে চাঁদপুরবাসীর দীর্ঘ দিনের উন্নয়ন প্রত্যাশার দাবীটুকু প্রধানমন্ত্রীর নিকট যথাযথভাবে তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

আমরা বিশ্বাস করি, এ দাবী সমূহ প্রধানমন্ত্রীর নিকট যথাযথ ভাবে উপস্থাপিত হলে, তিনি চাঁদপুরবাসীকে নিরাশ করবেন না। দাবীর প্রেক্ষিতে, তিনি অবশ্যই কোন না কোন ঘোষণা দিয়ে যাবেন। যা এ এলাকার মানুষকে আনন্দিত করার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের জয়ের জন্য ভূমিকা রাখবে।