ঢাকা, মার্চ ২৯, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, স্থানীয় সময়: ০৬:২২:৫৩

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

গাজা যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে রমজানে মুসলমানদের আল আকসায় নামাজ পড়ার অনুমতি দিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ গাজায় তুমুল যুদ্ধ ॥ চলছে যুদ্ধবিরতির বৈঠক জর্ডানে মার্কিন সৈন্য হত্যা ॥ দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার অঙ্গীকার যুক্তরাষ্ট্রের গাজা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে জাতিসংঘ দূতদের সাক্ষাত জি৭ নেতাদের ভিডিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী না হলে বাইডেন ও অনিশ্চিত গাজায় ইসরাইলের জোর হামলায় ৫৫ জন নিহত : হামাস হিজবুল্লাহ ‘লেবাননকে যুদ্ধে টেনে নিয়ে যাচ্ছে’: ইসরায়েল সামরিক বাহিনী গাজায় ৪ লাখ ২৩ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত: জাতিসংঘ

ধর্ষণের দায়ে ধর্মগুরু রাম রহিম সিং দোষী সাব্যস্ত : ভারতে তাণ্ডব

| ১১ ভাদ্র ১৪২৪ | Saturday, August 26, 2017

ভারতে তাণ্ডব, নিহত ৩২সম্প্রতি ভক্তদের এক সম্মেলনে ধর্মগুরু গুরমিতকে এভাবেই স্বাগত জানানো হয় (নিচে)। ছবি : ফাইল ছবি

ভারতের আলোচিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিং দুই নারী ভক্তকে ধর্ষণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ১৫ বছর আগে ওই অভিযোগ ওঠে। গতকাল শুক্রবার হরিয়ানা রাজ্যের পাঁচকুলা শহরের একটি বিশেষ আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেন। রায় ঘোষণার পর পাঁচকুলায় রাম রহিমের সমর্থকরা ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। তাদের নিবৃত্ত করতে পুলিশ গুলি, টিয়ার শেল ও জলকামান ব্যবহার করে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সহিংসতায় অন্তত ৩২ জন নিহত ও ২৫০ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচকুলায় ৩০ ও সিরসায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। সমর্থকরা মিডিয়ার গাড়ি, পুলিশের গাড়িসহ বহু গাড়ি, পেট্রলপাম্প ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। পাঞ্জাবের দুটি রেলস্টেশনে আগুন দিয়েছে। জ্বালিয়ে দিয়েছে দুই রাজ্যের বিভিন্ন থানা ও সরকারি অফিস। পাঁচকুলায় ৬০০ সেনা মোতায়েনের পাশাপাশি কারফিউ জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া পাঞ্জাবের ভাতিণ্ডা, মনসা, মুকতাসর, ফিরোজপুরেও কারফিউ জারি করা হয়েছে।হরিয়ানার সিরসায় পুলিশের সঙ্গে রাম রহিমের ভক্তদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষ ছড়িয়েছে রাজধানী দিল্লিতেও। সেখানে তারা অন্তত তিনটি বাস ও একটি খালি ট্রেনে আগুন লাগিয়েছে। দিল্লিতে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এর আগে সম্ভাব্য সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে হরিয়ানা ও পাঞ্জাবে ১৪৪ ধারা জারির পাশাপাশি ৫৭ হাজার পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। সিরসায় ওই ধর্মগুরু আশ্রমের সদর দপ্তর অবস্থিত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘আজকের এই সহিংসতা সত্যি পীড়াদায়ক। আমি এই সহিংসতার কঠোর নিন্দা জানাই। একই সঙ্গে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। ’ রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ সহিংসতার নিন্দা ও সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সহিংসতা ও সরকারি সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা অত্যন্ত নিন্দাযোগ্য। আমি সব নাগরিককে শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। ’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংও একই আহ্বান জানিয়েছেন। এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে টুইটারে আবেদন জানিয়েছেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টার এবং পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরন্দির সিং। দোষী সাব্যস্ত ৫০ বছর বয়সী রাম রহিম পাঞ্জাবের ধর্মীয় গোষ্ঠী ডেরা সাচা সৌদার প্রধান। আগামী সোমবার সাজা ঘোষণা করা হবে। তাঁর সর্বনিম্ন সাত বছর এবং সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড হতে পারে। রায় ঘোষণার পরপরই রাম রহিমকে গ্রেপ্তার করে সেনা হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, পরে তাঁকে হেলিকপ্টারে করে রোহতক কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

শিখ, হিন্দু, মুসলিম—সব ধর্মের চেতনা মিশিয়ে গুরমিত রাম রহিম একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় তৈরি করেছেন, যার নাম ডেরা সাচা সৌদা। এই নামেই তাদের আশ্রম রয়েছে হরিয়ানায়। এটি ওই সম্প্রদায়ের সাংগঠনিক সদর দপ্তরও। নিজেকে একজন আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে দাবি করা ডেরা সাচা সৌদার প্রধান রাম রহিমের কয়েক লাখ ভক্ত রয়েছে। ভারতের অসংখ্য ধর্মগুরুর মধ্যে রাম রহিমের জীবনযাপন ও চরিত্র বেশ ব্যতিক্রম, বর্ণাঢ্য ও বিরলও। তিনি একাধারে ধর্মপ্রচারক, সমাজ সংস্কারক, গায়ক, চিত্রনায়ক ও পরিচালক। ‘এমএসজি : দ্য মেসেঞ্জার’, ‘এমএসজি২ দ্য মেসেঞ্জার’, ‘এমএসজি : দ্য ওয়ারিয়র লায়ন হার্ট’ নামে তিনটি ছবিও করেন তিনি।

হরিয়ানায় গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রতি সমর্থন দিয়েছিলেন রাম রহিম। লাখ লাখ ভক্ত থাকায় বড় ভোটব্যাংক বিবেচনা করে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির অনেক নেতাই তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রাখেন।

১৫ বছর আগে নিজের আশ্রমেই দুই নারী ভক্তকে ধর্ষণ করার অভিযোগ ওঠে রাম রহিমের বিরুদ্ধে। ২০০২ সালে প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়িকে লেখা এক চিঠিতে ওই দুই নারীর একজন জানান, রাম রহিম অন্য শিষ্যাদেরও হরিয়ানার সিরসায় ডেরা চত্বরে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। এরপর পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই রাম রহিমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা রুজু করে। রাম রহিমের দুই শিষ্যার একজন সিবিআইকে গোপন জবানবন্দিতে জানান, তিনি ডেরাপ্রধানের চেম্বারে ঢোকার পরই দরজা বন্ধ হয়ে যায় এবং তিনি দেখেন রাম রহিম বড় স্ক্রিনে পর্নো ছবি দেখছেন। ২০০৭ সালে শুনানি শুরুর পর ১০ বছরে মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে। বিচারের পুরোটা সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এসেছেন রাম রহিম।

গতকালের রায় ঘোষণাকে ঘিরে পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় আগেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বিভিন্ন রাজ্য থেকে রাম রহিমের দুই লাখ ভক্ত চণ্ডীগড় ও পাঁচকুলায় জড়ো হতে শুরু করে। রায় বিপক্ষে গেলে সহিংসতা শুরু হতে পারে—এমন আশঙ্কায় সকাল থেকে পাঁচকুলায় সেনাবাহিনী নামানো হয়। ৫৭ হাজার পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয় হরিয়ানা ও পাঞ্জাবে। রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগর ও হনুমানগড়ে ১৪৪ ধারা জারি করার পাশাপাশি ৪৮ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুই রাজ্যের মধ্য দিয়ে চলাচল করে এমন দুই শর বেশি ট্রেন পরবর্তী তিন দিনের জন্য বাতিল করে দেওয়া হয়। শহরে ঢোকার প্রতিটা গাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। অন্যদিকে রাতভর পুলিশ কর্মকর্তারা মাইক হাতে রাস্তায় ঘুরে বেরিয়েছেন জমায়েত হওয়া ভক্তদের ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে। বহু লোককে গ্রেপ্তার করতে হতে পারে বিবেচনায় একটি স্টেডিয়াম ও বেশ কিছু স্কুলকে অস্থায়ী কারাগার হিসেবে তৈরি করে প্রশাসন।এই উত্তেজনার মধ্যেই সিরসায় নিজের সাংগঠনিক দপ্তর থেকে ১০০ গাড়ির বহর নিয়ে রওনা হয়ে আড়াই শ কিলোমিটার দূরে পাঁচকুলা আদালতে পৌঁছেন রাম রহিম সিং। তবে ওই বহরের দুটি গাড়িকে শেষ পর্যন্ত আদালত চত্বরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়। রায় শোনার পর আদালতের বাইরে কান্নায় ভেঙে পড়ে তাঁর বহু সমর্থক। এদের মধ্যে বহু নারী সমর্থকও রয়েছে।

এর পরই ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ ও সহিংসতা। রাম রহিমের সমর্থকরা তাণ্ডবে নেমে পড়ে পাঁচকুলায়। তারা রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালানো শুরু করে। পুলিশের ওপরও হামলা চালায় তারা। কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম জানায়, রাত ৮টা  নাগাদ পাঁচকুলা শহরে সহিংসতায় মৃতের সংখ্যা ৩০-এ দাঁড়ায়। আহত হয়েছে আড়াই শতাধিক মানুষ। সহিংসতা সিরসাসহ হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দুজন নিহত হয়েছে। রাজধানী দিল্লিতে তিনটি বাস ও একটি খালি ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। দিল্লিতে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়। সিরসায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এই সিরসায়ই ডেরা সাচা সৌদার হেডকোয়ার্টার অবস্থিত। সিরসায় পুলিশের সঙ্গে রাম রহিম সমর্থকদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল, ফাঁকা গুলি ও জলকামান ব্যবহার করে।

হরিয়ানার সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে পিটিআই জানিয়েছে, পাঁচকুলায় মারা গেছে ৩০ জন। হরিয়ানা রাজ্যের পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজিপি) মুহাম্মদ অকিল জানিয়েছেন, হাঙ্গামা সৃষ্টিকারী অন্তত এক হাজার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হরিয়ানা পুলিশের মহাপরিচালক বি এস সান্ধু সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জানান, পরিস্থিতি তাঁদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি।