ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১ হাজার ১৮০ জন প্রার্থীর মধ্যে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রার্থী মাত্র ১৬ জন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণে একজন মেয়র পদে, বাকিরা সাধারণ ও সংরক্ষিত মহিলা আসনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রামে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দুজনকে কাউন্সিলর পদে সমর্থন দিয়েছে। তবে ২০-দলীয় জোট বা বিএনপি নির্বাচনে একজনকেও মনোনয়ন দেয়নি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র বা কাউন্সিলর পদে একজনও সংখ্যালঘু প্রার্থী নেই।
মোট প্রার্থীর মধ্যে সংখ্যালঘু প্রার্থীর সংখ্যা ১.৩৫ শতাংশ। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। এরা হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্বের এই চিত্রকে ‘হতাশাজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন রঞ্জন বিশ্বাস। এই ওয়ার্ডেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আরেক প্রার্থী বিশ্বজিৎ ধর। দক্ষিণে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন দীলিপ ভদ্র। সংরক্ষিত মহিলা আসনে আছেন দুজন। এঁরা হলেন সংরক্ষিত মহিলা আসন-২ থেকে সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য এবং মহিলা আসন-৫ থেকে শম্পা বসু। শম্পা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমর্থন পেয়েছেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সাধারণ নারী আসনে সংখ্যালঘু প্রার্থী আছেন ১১ জন। এর মধ্যে ৩২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জহর লাল হাজারী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। অন্যদের মধ্যে আছেন ১০ নম্বর ওয়ার্ডে দয়াময় আচার্য, ১১ নম্বর ওয়ার্ডে সুজিত দাশ, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে আশুতোষ দত্ত, ২১ নম্বর ওয়ার্ডে বিজয় কুমার চৌধুরী ও শৈবাল কুমার দাশ, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে অশোক কুমার দাশ, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে অসিত রায় এবং ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে অনুপ বিশ্বাস।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা আসন-২ এ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অশ্রু চৌধুরী এবং আসন-৮ এ আছেন নীলু নাগ।
সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা বলছেন, সিটি নির্বাচনে জনসংখ্যার অনুপাতে এই প্রতিনিধিত্বটা হতাশাজনক। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণা দাশগুপ্ত বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো সংখ্যালঘুদের কেবল ভোটার হিসেবে বিবেচনা করে, তাদের প্রতিনিধিত্ব চায় না। বিবেচনাতেও নেয় না। এর জন্যই তাদের প্রতিনিধিত্বের এই হতাশাজনক চিত্র।’
ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীদের নির্বাচন সমন্বয়কারী সাংসদ আব্দুর রাজ্জাক স্বীকার করেন এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত সংখ্যালঘু প্রার্থীর সংখ্যা বেশ কম। তাঁর দাবি, ঢাকায় আওয়ামী লীগের সমর্থনই চেয়েছিলেন মাত্র দুজন প্রার্থী। এর মধ্যে একজনকে দেওয়া হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘুদের পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব চায় বলে দাবি করেন তিনি।
সংখ্যালঘুদের প্রার্থী করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান বিবেচ্য বিষয় হলো, যে এলাকায় সংখ্যালঘু ভোট অপেক্ষাকৃত বেশি সেই এলাকায় সেই সম্প্রদায়ের প্রার্থী দেয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামে যে দুটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিয়েছে সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু ভোটার আছে। আব্দুর রাজ্জাকও বললেন, ‘প্রার্থী জিততে পারবে কি না, সে বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় নিতেই হয়।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেতে চেষ্টা করেছিলেন চিত্তরঞ্জন ধর। না পাওয়ায় তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার এলাকায় সংখ্যালঘু ভোটার ১৫ শতাংশ। এই ভোটার আমার জয়ী হওয়ার জন্য হয়তো পর্যাপ্ত নয় বিবেচনা করেই দল সমর্থন দেয়নি।’
তিন সিটিতে একজন প্রার্থীকেও দলীয় মনোনয়ন দেয়নি বিএনপি। ঢাকা দক্ষিণে বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে আছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহ। কোনো সংখ্যালঘু প্রার্থীকে বিএনপির পক্ষ থেকে সমর্থন না দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন ‘এটা আমার বিষয় নয়। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলুন।’ স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মওদুদ আহমদ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সালেহউদ্দিন এম আনিসুজ্জামান বলেন, ‘এ থেকে স্পষ্ট হয়, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো নৈতিকভাবে সংখ্যালঘুদের বিষয়ে সংবেদনশীল নয়। দলগুলো যদি বলে উপযুক্ত লোকের অভাব আছে, তা মানার কারণ নেই।’