ঢাকা, এপ্রিল ১৯, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১৫:১৪:২৩

ডায়াবেটিসে মুখের যত্ন

| ২৭ কার্তিক ১৪২৪ | Saturday, November 11, 2017

 

ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। সবার জানা জরুরি এ রোগের প্রভাব মারাত্মক হলেও সঠিক জ্ঞান ও তার অনুশীলনের মাধ্যমে একে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তারপরও ডায়াবেটিসজনিত মৃত্যুর হার কমছে না, ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের সূত্রে বিশ্বে প্রতি ছয় সেকেন্ডে একজন মারা যাচ্ছে ডায়াবেটিসের জটিলতায়।

 

বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের সহায়তায় ও চিকিৎসকদের সচেতনতামূলক পরামর্শে অনেকেই এখন সচেতন হচ্ছেন, বিশেষ করে ডায়াবেটিস জনিত জটিলতা থেকে চোখ, পা, স্নায়ু, কিডনি বা হার্টকে রক্ষা করতে। দুঃখজনক হলেও সত্য, মুখের যত্নের ব্যাপারে উদাসীনতা এখনও অনেকটা স্পষ্ট, যেমন- সঠিক নিয়মে নিয়মিত দাঁত ও মুখ পরিষ্কার না করা

ডায়াবেটিক রোগীদের মুখ শুষ্ক হয়ে থাকে আর নিঃসৃত লালাতে অধিক সুগার থাকায় স্বাভাবিক মানুষের তুলনায় ডেন্টাল ক্যারিজ বা জীবাণু দ্বারা দাঁতে গর্ত, মাড়ি রোগ ও মুখে দুর্গন্ধের আশংকা অনেক বেশি।

শুধু তাই নয়, জিহ্বা, তালু, চোয়ালের ভিতরের অংশ, ঠোঁটে বিভিন্ন ধরনের ঘা সৃষ্টি হতে পারে।

মুখের স্বাস্থ্য রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। মুখ পরিষ্কারের নিয়ম সঠিকভাবে মেনে চলার মাধ্যমে মুখের অভ্যন্তরের বেশিরভাগ রোগের পাশাপাশি শরীরের অনেক রোগকে প্রতিরোধ করা যায়।

ফ্লোরাইডযুক্ত উন্নতমানের টুথপেস্ট ও নরম টুথ ব্রাশের মাধ্যমে রাতে খাবার পর ও সকালে নাস্তার পর নিয়মানুযায়ী দাঁত পরিষ্কার করতে হবে।

দাঁতের পাঁচটি পৃষ্ঠের মধ্যে বাইরের দিকের, ভেতরের দিকের বা চর্বনে ব্যবহৃত পৃষ্ঠ ব্রাশের মাধ্যমে পরিষ্কার করা গেলেও দুই দাঁতের মধ্যবর্তী পৃষ্ঠ দুইটি পরিষ্কারের জন্য বাজারজাত ডেন্টাল ফ্লসের ব্যবহার শিখতে হবে।

প্রয়োজনে মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করতে হবে। মুখের আর্দ্রতা বজায় রাখতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, পর্যাপ্ত পানি পানের পাশাপাশি চিনিমুক্ত চুইংগাম চেবানো যেতে পারে।
মুখের রোগকে অবহেলা করা

অনেক ডায়াবেটিক রোগী মাঢ়ি দিয়ে রক্ত পড়া, দাঁতে ব্যথা বা মুখে বিভিন্ন ধরনের ক্ষত নিয়ে চিকিৎসা গ্রহণে অবহেলা করেন। অনেকে আবার ডায়াবেটিস নিয়ে চিকিৎসা নেয়ার বিষয়ে ভয় পান, ভিত্তিহীন চিন্তা করে যে ডায়াবেটিস রোগীদের দাঁতের চিকিৎসা করতে গিয়ে সমস্যা আরও বাড়তে পারে, কেউ কেউ আবার চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ সেবনে জটিলতা আরও বড় করে।

সমগ্র বিশ্বের চিকিৎসা গবেষকরা, রোগ অনুভব না করলেও ছয় মাস পরপর ডেন্টাল চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে জোরালো তাগিদ দেন।

সঙ্গে রোগীর সকালে খালি পেটে ও নাস্তার দুই ঘণ্টা পর রক্তে সুগারের মাত্রা ও HbA1C-এর রিপোর্টসহ ক্রিয়েটিনিন আর অভুক্ত লিপিড প্রোফাইল দেখে চিকিৎসক নির্ধারণ করবেন রোগীর মুখের কোন রোগের কী ধরনের চিকিৎসা প্রদান করবেন, প্রয়োজন পড়লে ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ এন্ড্রোক্রাইনোলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। যে কোনো রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে চিহ্নিত হলে তার জটিলতা অনেক কমে যায়, চিকিৎসা পদ্ধতিও হয় সহজ।

চিকিৎসা গবেষকরা প্রমাণ করেছেন দীর্ঘমেয়াদি মাঢ়ি ও দাঁতের রোগ শুধু দাঁতের অপূরণীয় ক্ষতি করেই মুখের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, সহজেই রক্ত বাহিকায় মিশে হার্টের বিভিন্ন রোগসহ স্ট্রোক করাতে পারে, শুধু তাই নয়, ইনসুলিনের কার্যকারিতাকে কমিয়ে রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি মুখের ঘা থেকে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেক।

ডায়াবেটিস রোগীর রক্ত নালীগুলো মোটা ও অনমনীয় হতে শুরু করে। ফলে শরীরের অন্য কোষের মতো মুখের কোষগুলোও রক্তবাহিকা থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না। শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধক উপাদানগুলোও আক্রান্ত স্থানে স্বাভাবিকভাবে আসতে পারে না। সে কারণে সহজেই সংক্রমণ হতে পারে আর তা সহজে ভালো হতে চায় না।

সুতরাং ডায়াবেটিক রোগীর মুখের রোগ বা কোনো অস্বাভাবিকতা নিয়ে বসে থাকাটাবোকামি।

সময় এসেছে ডায়াবেটিস ও ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা থেকে রোগীদের মুক্ত থাকা। সঠিকভাবে সুগার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ সেবন ও শারীরিক ব্যায়াম ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের পাশাপাশি কঠোরভাবে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন জরুরি। ধূমপান বন্ধের কোনো বিকল্প নেই।

চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়েও রোগীরা জটিলতা এড়িয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।

লেখক : ডেন্টাল সার্জন, রাজ ডেন্টাল সেন্টার ও রাজ ডেন্টাল ওয়ার্ল্ড, ঢাকা