বিদ্যুৎ চুরি চিহ্নিত ও প্রতিরোধ করার জন্য বিভিন্ন এজেন্সির সমন্বয়ে বিদ্যুৎ গোয়েন্দা সেল গঠন করার বিধান রেখে ‘বিদ্যুৎ আইন ২০১৬’-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। খসড়া আইনে ট্রেড ইউনিয়ন ও সিবিএ বাতিল করার বিধান থাকলেও মন্ত্রীদের বিরোধিতার মুখে তা প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে একজন সিনিয়র মন্ত্রী কালের কণ্ঠকে জানান, মন্ত্রিসভা বৈঠকে উল্লেখ করার মতো একটি এজেন্ডাই ছিল। সেটি হচ্ছে বিদ্যুৎ আইন। এই আইন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। খসড়া আইনের ৬৯ ধারায় বিদ্যুৎ সেক্টরে বিরাজমান ট্রেড ইউনিয়ন ও সিবিএ কার্যক্রম রহিত ও বাতিল করার বিধান রাখা হয়। এ ছাড়া বিদ্যুৎ লাইসেন্সিং প্রতিষ্ঠানকে শ্রম আইনের আওতাবহির্ভূত রাখা হয়েছে। বিদ্যুতের সংবেদনশীলতা ও অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় বিদ্যুৎ লাইসেন্সিং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্ষেত্রে শ্রম আইনের প্রয়োগ রহিত করা হয়েছে।
বৈঠকের শুরুতেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক। তিনি জানান, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ধরনের বিধান যোগ করা সরকারের উচিত নয়। কারণ এই বিধান যোগ করা হলে মনে হবে বর্তমান সরকার ট্রেড ইউনিয়ন ও সিবিএর বিরুদ্ধে। তা ছাড়া বিদ্যুৎ সেক্টরের ১৫টি ট্রেড ইউনিয়নের মধ্যে ১৪টিই সরকার সমর্থক। এই অবস্থায় কেন ট্রেড ইউনিয়ন বন্ধের বিধান করা হবে। তা ছাড়া এই আইনটি পাস করা হলে শ্রমিকরা আন্দোলনে নামবে। একটি স্থিতিশীল সেক্টরকে কেন অস্থির করা হবে। শ্রম প্রতিমন্ত্রীর এই বক্তব্য সমর্থন করে কড়া অবস্থান নেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান। একই সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ট্রেড ইউনিয়ন ও সিবিএ বহাল রাখার পক্ষে কথা বলেন। এ সময় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ট্রেড ইউনিয়ন নিষিদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেন। পুরো বিষয় পর্যালোচনা শেষে প্রধানমন্ত্রী খসড়া আইনের ৬৯ ধারাটি বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন।
বৈঠকে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মন্ত্রিসভার কাছে আমার অনুরোধ উপস্থাপিত খসড়া বিদ্যুৎ আইন থেকে ৬৯ ধারা বাদ দেওয়া হোক। পরবর্তী সময়ে ত্রিপক্ষীয় আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮-এর আলোকে বিদ্যুৎ সেক্টরের জন্য একটি আধুনিক শ্রম আইন করা যেতে পারে। অথবা শ্রম আইন সংশোধন করে উন্নত বিশ্বের মতো বিশেষ করে পশ্চিমা দেশের মতো সেক্টরভিত্তিক একক ট্রেড ইউনিয়ন করার প্রয়োজনীয় বিধান সংযোজন করা যেতে পারে।’ শ্রম প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, শ্রম আইন শুধু ট্রেড ইউনিয়ন করার জন্য নয়। চাকরির শর্তাবলি, কর্মঘণ্টা, ছুটি, কাজের সময়ের সম্প্রসারণ, শ্রমিকের স্বাস্থ্য বিধি, নিরাপত্তা, প্রসূতি কল্যাণ, কম্পানির মুনাফায় শ্রমিকের অংশগ্রহণের বিষয় সন্নিবেশিত হয়। একটি উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানকে শ্রম আইনের বাইরে রাখলে শ্রমিক কল্যাণের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে শ্রমজীবী মানুষ বঞ্চিত হবে। বাংলাদেশে শ্রম আইন একটি মৌলিক আইন। মৌলিক আইনের সঙ্গে প্রস্তাবিত আইন সাংঘর্ষিক হলে মৌলিক আইন অগ্রাধিকার পায়। ২০০৯ সালে চা-বাগান সেক্টরে একটি নির্বাচিত সিবিএকে ভেঙে দেওয়ার ফলে চা-বাগানের শ্রম পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছিল এবং একই সঙ্গে সরকারকে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়তে হয়েছিল। পরে সিবিএ নির্বাচন করে চা-বাগানের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হয়েছে।