ঢাকা, মার্চ ২৯, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, স্থানীয় সময়: ১৭:১৯:৪৭

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির পণ্যমূল্য সহনীয় রাখতে সরকারের পাশাপাশি জনগণেরও নজরদারি চাই : সংসদে প্রধানমন্ত্রী রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে : প্রধানমন্ত্রী দিনের তাপমাত্রা বাড়তে পারে বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও উপনেতা আনিসুল ইসলাম রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় আসার নিশ্চয়তা না পেয়ে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে : প্রধানমন্ত্রী

জিডি ও মামলা তদন্তে গড়িমসি,হত্যাকাণ্ডের পর টনক নড়ে

| ২৩ ভাদ্র ১৪২১ | Sunday, September 7, 2014

জিডি ও মামলা তদন্তে গড়িমসি, পড়ছে লাশ

অনেক দিন ধরেই মগবাজারের চিহ্নিত সন্ত্রাসী কাইল্যা বাবু মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে আসছিল একই এলাকার বাসিন্দা রুনা আক্তার বৃষ্টি ও তার ভাই কালাচাঁনের কাছে। চলতি বছরের ১২ মার্চ রাজধানীর রমনা থানায় এ ব্যাপারে মামলাও দায়ের করেন বৃষ্টি। বহু দিন পেরোলেও পুলিশ কাইল্যা বাবুকে গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত মূল আসামির হাতেই নির্মমভাবে প্রাণ হারাতে হয় বৃষ্টিকে। কোনো ঘটনায় থানায় মামলা বা সাধারণ ডায়েরির পরও তা তদন্তে তেমন কোনো গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। যারা মামলা বা জিডি করছেন, পরে তারাই নির্মম টার্গেট হন। অনেক ঘটনায় সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজরা হত্যা করছে বাদীকে। কেউ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও মামলা করলেও প্রথমে থানা পুলিশ নির্লিপ্ত থাকে। হত্যাকাণ্ডের পর টনক নড়ে। নড়েচড়ে বসেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এমনও ঘটনা ঘটেছে জিডি দায়ের করে বাসায় পেঁৗছার পথেই হত্যা করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে। আবার রহস্যজনক ‘নিখোঁজে’র অনেক ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে জিডি করা হয়। মাসের পর মাস পার হলেও এ ব্যাপারে পুলিশ তৎপর হয় না। বৃষ্টির ভাই কালাচাঁন বলেন, মামলার পর কাইল্যা বাবুকে গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর হলে তিনজনকে প্রাণ হারাতে হতো না।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (গণমাধ্যম) মাসুদুর রহমান সমকালকে বলেন, জিডি হওয়ার পর তা অনুসন্ধানযোগ্য হলে গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কোনো ঘটনায় মামলা হলে পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালায়। তবে অভিযুক্তরা পালিয়ে স্থান পরিবর্তন করে অপরাধে জড়ায়।

রমনা থানার ওসি মশিউর রহমান সমকালকে বলেন, চাঁদা দাবির ঘটনায় মার্চ মাসে কাইল্যা বাবুসহ কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছিল। এরপর কাইল্যা বাবুকে গ্রেফতারে পুলিশ অনেক চেষ্টা করে। তবে মামলার তদন্তের গুরুত্ব দেওয়া হয়নি- এ অভিযোগ মানতে রাজি নন তিনি।

সাত বছর ধরে ওসি হিসেবে রাজধানীতে দায়িত্ব পালন করছেন এমন এক কর্মকর্তা জানান, কোনো ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি হওয়ার পর পুলিশের অনুসন্ধান শুরু করতে হয়। জিডির অভিযোগের ভিত্তিতে আমলযোগ্য অপরাধ হলে তদন্ত শেষে মামলা করার নিয়ম রয়েছে। হত্যার হুমকি দেওয়ার ঘটনায় থানায় জিডি হলে দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারা মোতাবেক তা তদন্তে আদালতের অনুমতি চায় পুলিশ। জমিজমার বিরোধ নিয়ে কোনো পক্ষ জিডি করলে কার্যবিধির ১০৭ ও ১০৯ ধারা মোতাবেক পুলিশ সরাসরি অনুসন্ধান শুরু করতে পারে। তবে অধিকাংশ জিডির ক্ষেত্রে পুলিশ নির্লিপ্ত, উদাসীন। ঊর্ধ্বতনদের তদবির থাকলে ভিন্ন কথা।

অনেক সময় থানা পুলিশ চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা নিতেও রাজি হয় না। সার্টিফিকেট, দলিল, লাইসেন্স, পাসপোর্ট, মূল্যবান রসিদ, চেকবই, এটিএম বা ক্রেডিটকার্ড, স্বর্ণালঙ্কার, নগদ অর্থ ইত্যাদি হারালে থানায় জিডি করা হয়। কোনো হুমকির মুখোমুখি হলে বা হুমকির আশঙ্কা থাকলে অথবা কেউ নিখোঁজ হলেও জিডি করার সুযোগ আছে। সাধারণত যেসব ক্ষেত্রে মামলা হয় না, সেসব ঘটনায় থানায় জিডি করা যায়। পুলিশ আইনের ৪৪ ধারায় সব থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি রেজিস্টার রাখা বাধ্যতামূলক। জিডি রেজিস্টার সংরক্ষণের দায়িত্ব ওসির ওপর। যে কোনো নাগরিকের কোনো তথ্য বা সংবাদকে সরকারি দলিলে সনি্নবেশিত করার সহজতম উপায় হলো থানায় জিডি নথিভুক্ত করা।

রাজধানীর কলাবাগানে যুবলীগ নেতা ফয়েজের রহস্যজনক নিখোঁজের পর তার স্ত্রী গত ৬ এপ্রিল কলাবাগান থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। ডায়েরি নম্বর ১৯২। জিডির একদিন পরই গাজীপুর এলাকা থেকে ফয়েজের লাশ উদ্ধার করা হয়। জিডি করার পরও পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেনি।

২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল রাজধানীর উত্তর বাড্ডার পূর্বাচল সড়কের ১০ নম্বর লেনের এক নম্বর বাড়িতে শিল্পকলা একাডেমির সাবেক পরিচালক মো. নজরুল হককে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এতে তার স্ত্রী সেলিনা হকও গুরুতর আহত হন। হত্যাকাণ্ডের পরদিন সন্ধ্যায় নিহতের একমাত্র কন্যা লোপা বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এজাহারে সীমানা নিয়ে বিরোধের কথা উল্লেখ করে প্রতিবেশী কামাল হোসেন, নিহতের বাসার ভাড়াটিয়া রিজিয়া, কাহার, আমিরুল্লাহসহ নয়জনকে আসামি করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ চার্জশিট দাখিলের পর মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।

নজরুল হত্যাকাণ্ডের আগেই নিহতের স্বজনরা বাড্ডা থানায় পাঁচটি সাধারণ ডায়েরি ও দুটি মামলা করেন। পরপর পাঁচটি সাধারণ ডায়েরির পরও পুলিশ নির্বিকার ছিল। শেষ পর্যন্ত নজরুলকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। নজরুলের কন্যা ফারহানা হক লোপা সমকালকে বলেন, হত্যার পর কামাল হোসেনকে প্রধান আসামি করে মামলা করা হয়। তিনি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের আগেই কামাল ও তার সহযোগীদের হুমকির ব্যাপারে থানায় ৫টি জিডি ও দুটি মামলা করেছি। এলাকায় কামালের প্রভাব থাকায় থানা পুলিশ মামলা ও জিডির ব্যাপারটি গুরুত্ব না দেওয়ায় বাবাকে ওই আসামিরা হত্যা করে।’

২০১০ সালের ২৬ ডিসেম্বর সকালে পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের মতলব জেনারেল স্টোরের মালিক নাজির হোসেনকে একটি অপরিচিত ফোন নম্বর (০১৮২৯৫৯৫৫৩০) থেকে দবির পরিচয় দিয়ে ফোন করে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। এর পর ওই দিনই চাঁদার দাবিতে নাজির হোসেনকে কয়েক দফা ফোন করা হয়। এ ঘটনায় ওই দিন সন্ধ্যায় পল্লবী থানায় জিডি করে বাসায় ফেরার আগেই নাজির হোসেনের দোকানের ম্যানেজার সজীবকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

২০১২ সালে দক্ষিণখানে খুন হন সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন ও তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মুক্তা। ঘটনার আগে নাছির উদ্দিন নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসীরা তাকে ও তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তারকে খুন করে। একই বছরের আগস্টে পল্লবীতে আবদুল কুদ্দুস নামে এক ব্যক্তিকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। এর আগে তার পরিবারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেও পুলিশের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। ২০১০ সালে রাজধানীর গুলশানে ব্যবসায়ী সাদেকুর রহমান ও তার স্ত্রী রোমেনা নার্গিসকে বাসায় ঢুকে নৃশংসভাবে খুন করে স্থানীয় সন্ত্রাসী ও বখাটে যুবক রুবেল।

হত্যাকাণ্ডের কিছু দিন আগে থেকেই রুবেল সাদেকুরের স্কুলপড়ূয়া এক মেয়েকে বিয়ের জন্য চাপ দিয়ে আসছিল। বিয়ে না দিলে তাদের হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। হুমকি দেওয়ার পর সাদেকুর গুলশান থানায় জিডি করেছিলেন। জিডির খবর শুনে রুবেল ব্যবসায়ী সাদেকুর ও তার স্ত্রীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। একই বছর পুরান ঢাকার ৭০ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার হাজি আহমদ হোসেনকে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের আগে থেকেই সন্ত্রাসীরা তাকে হুমকি দিয়ে আসছিল। তিনি থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করেন। কয়েক দিনের মধ্যেই সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে হত্যা করে।

২০১১ সালের ৩ ডিসেম্বর থেকে রহস্যজনক নিখোঁজ হন সাবেক ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের (বর্তমান ২৮ নম্বর ওয়ার্ড) সভাপতি নুরু হাজি। ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে খোঁজ নেই নুরু হাজির বড় মেয়ে স্বপ্নার স্বামী আবদুুল মান্নানের। এ ঘটনায় তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে জিডি করা হলেও পুলিশ আজও রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি।