ঢাকা, এপ্রিল ২০, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০৯:১৮:৩৯

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় আসার নিশ্চয়তা না পেয়ে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে : প্রধানমন্ত্রী মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষের সাংস্কৃতিক সম্পৃক্ততার আহ্বান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর সংসদে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে স্বতন্ত্র সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প বাস্তবায়নে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে পিপিপি বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আগমন স্বচ্ছ নির্বাচনে সহায়ক : তথ্যমন্ত্রী

জামিনে মুক্ত হয়ে ঢাকার বাসায় প্রবীর সিকদার

| ৫ ভাদ্র ১৪২২ | Thursday, August 20, 2015

জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ফরিদপুর থেকে ঢাকার বাসায় ফিরেছেন সাংবাদিক প্রবীর সিকদার। বুধবার (১৯ আগস্ট) রাত পৌনে নয়টার দিকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের বাসায় পৌঁছেছেন।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সন্তান ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির সন্ত্রাসী হামলায় পঙ্গু এই সাংবাদিক দুপুর একটা ৪৭ মিনিটে ফরিদপুর জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন। এরপর ফরিদপুর প্রেসক্লাবে যান তিনি। স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে কিছু সময় কাটিয়ে কোতোয়ালি থানায় গিয়ে মোবাইল ফোনসহ নিজের জিনিসপত্র সংগ্রহ করেন, যেগুলো থানায় থাকা ও রিমান্ডে নেওয়ার সময় পুলিশের জিম্মায় ছিল।

এরপর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গ্রামের বাড়ি কানাইপুরে যান প্রবীর। সেখানে তার প্রতিষ্ঠিত কিশলয় বিদ্যানিকেতন ও বেগম রোকেয়া বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও স্থানীয় সাংবাদিকরা তাকে বিপুল সংবর্ধনা দেয়।

বিকেলে সপরিবারে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন প্রবীর সিকদার। রাত আটটার পরে ঢাকায় নেমে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে ধর্মীয়মতে উপাসনায় অংশ নেন তিনি।

এর আগে বেলা পৌনে বারটার দিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে (আইসিটি) ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা মামলায় জামিন পান সাংবাদিক প্রবীর সিকদার। তার জামিন মঞ্জুর করেন ফরিদপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১নং আমলি আদালতের বিচারক হামিদুল ইসলাম। এরপর আইনজীবীরা জামিনের কাগজপত্র নিয়ে জেলা কারাগারে যান। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে প্রবীর সিকদারকে জামিনে মুক্তি দেন কারা কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন একই আদালত।
রিমান্ডে নেওয়ার জন্য বুধবার সকালে ফরিদপুর জেলা কারাগার থেকে কোতোয়ালি থানায় নেওয়া হয় প্রবীর সিকদারকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফের একই আদালতে হাজির করা হয় তাকে। তবে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিরাজুর রহমান আদালতকে জানান, তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হলেও একদিনেই জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়েছে। রিমান্ডের আর প্রয়োজন নেই।
এরপর প্রবীর সিকদারের জামিনের আবেদন জানান তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আলী আশরাফ নান্নু। শুনানি শেষে পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় আগামী ২২ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন পর্যন্ত প্রবীর সিকদারের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট অনিমেষ রায় বাংলানিউজকে জানান, আমরা মানবিক কারণে জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করিনি।
রোববার (১৬ আগস্ট) রাতে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে ফরিদপুরে নিয়ে যাওয়ার পর প্রবীরকে কোতোয়ালি থানায় রাখা হয়েছিল। সোমবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সে সময় তাকে দশদিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা। আদালত সেদিন প্রবীর সিকদারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে মঙ্গলবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।
মঙ্গলবার রিমান্ড নামঞ্জুর ও জামিনের আবেদন জানিয়ে প্রবীর সিকদার নিজে ও তার আইনজীবীরা শুনানি করলেও আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
প্রবীর সিকদার অনলাইন নিউজপোর্টাল উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ, বাংলা দৈনিক বাংলা ৭১ এবং উত্তরাধিকার নামের ত্রৈমাসিক পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। রাজধানীর ইন্দিরা রোডে পত্রিকাগুলোর কার্যালয়।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে মন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অভিযোগে সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনের ৫৭ (২) ধারায়  কোতোয়ালি থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন ফরিদপুরের আওয়ামী লীগ নেতা, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা এপিপি অ্যাডভোকেট স্বপন কুমার পাল। রোববার বিকেলে তিনি ওই মামলা করার পর রাতে প্রবীর সিকদারকে তার রাজধানীর ইন্দিরা রোডের কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করে ফরিদপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ওই মামলায় প্রবীর সিকদারকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
লিখিত এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, গত ১০ আগস্ট বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে ‘আমার জীবন শংকা তথা মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী থাকবেন’ শিরোনামে জনসমক্ষে একটি স্ট্যাটাস পোস্ট করেন। এই পোস্টটি পড়ে আমার দৃঢ় বিশ্বাস হয় যে, উক্ত প্রবীর সিকদার ইচ্ছাকৃতভাবে গণমানুষের প্রিয় নেতা মাননীয় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি সম্পর্কে মিথ্যা অসত্য লেখা লিখে সেটি তার নিজস্ব ফেসবুকে পোস্ট করে মাননীয় মন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন এবং উক্ত লেখাটি জনসমক্ষে প্রকাশের মাধ্যমে উস্কানি প্রদান করে শান্তিপ্রিয় মানুষের কাছে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়কে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য বিদ্বেষ ছড়িয়েছেন। এর ফলে মাননীয় মন্ত্রীর মানহানি ঘটেছে। যা একটি ফৌজদারি অপরাধ।
মামলার আরজিতে আরও বলা হয়, ওই ফেসবুক স্ট্যাটাসে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন দাবি করে প্রবীর সিকদার বলেন- তার মৃত্যু হলে স্থানীয় সরকার, সমবায় ও পল্লী উন্নয়নমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার দায়ী থাকবেন।
তবে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানায় নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে ব্যর্থ হয়ে প্রবীর সিকদার ওই স্ট্যাটাস দেন।
পরিবার বলছে, রোববার সন্ধ্যায় প্রবীর সিকদারকে নিয়ে যান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তার ইন্দিরা রোডের কার্যালয় থেকে শেরেবাংলানগর থানা পুলিশের একটি দল প্রবীর সিকদারকে নিয়ে যায়। পরে তাকে মিন্টো রোডে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হলেও রাতেই তাকে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
সাংবাদিক প্রবীর সিকদার মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সন্তান। তার বাবাসহ পরিবারের ১৪ জন একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শহীদ হয়েছিলেন। দৈনিক জনকণ্ঠের ফরিদপুরের নিজস্ব সংবাদদাতা থাকাকালে পত্রিকায় প্রকাশিত ‘সেই রাজাকার’ কলামে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুসা বিন শমসেরের বিতর্কিত ভূমিকার বিবরণ তুলে ধরেন তিনি। এরপর ২০০১ সালের ২০ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হন। বর্তমানে একটি পা হারিয়ে পঙ্গু জীবন যাপন করছেন তিনি।
ফরিদপুরের কানাইপুরের ঐতিহ্যবাহী জমিদার সিকদার বাড়ির সন্তান প্রবীর সিকদার দৈনিক জনকণ্ঠের ফরিদপুরের নিজস্ব সংবাদদাতা ও পরে পদোন্নতি পেয়ে স্টাফ রিপোর্টার পদে কর্মরত ছিলেন দীর্ঘদিন। পরে ঢাকায় এসে দৈনিক সমকাল ও দৈনিক কালের কণ্ঠে কাজ করেছেন তিনি।