ঢাকা, এপ্রিল ১৯, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১৭:৩০:৫১

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

একীভূত হতে চাওয়া ব্যাংকের সম্পদের দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হবে টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ নেই : ওবায়দুল কাদের বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের ঈদ যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

জাতীয় নির্বাচনে প্রস্তুত নৌকার মাঝি, ধানের চাষি

| ২৪ অগ্রহায়ন ১৪২৫ | Saturday, December 8, 2018

প্রস্তুত নৌকার মাঝি, ধানের চাষিআসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। গতকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে প্রার্থীদের নৌকা প্রতীক বরাদ্দের চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর আগে যেসব আসনে একাধিক প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল সেসব আসনেও একক প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে দলটি। ১৪ দলের শরিকদের জন্য ১৩টি এবং বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টকে তিনটি আসন ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তারা জাতীয় পার্টিকে ৪২টি আসন ছেড়ে দিতে পারে। তবে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন বণ্টনের বিষয়টি এখনো পুরোপুরি নিষ্পত্তি হয়নি। ফলে জাপা ছাড়া অন্য শরিকদের আসনসহ মোট ২৫৮টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করল আওয়ামী লীগ।

একাধিক প্রার্থী ছিল এমন ১৭ আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করে গতকাল তাঁদের হাতে প্রতীক বরাদ্দের জন্য নির্বাচন কমিশন বরাবর চিঠি তুলে দেয় আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সই করা ওই চিঠি হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন সম্পন্ন করল ক্ষমতাসীন দল। যেসব আসনে একাধিক প্রার্থী ছিলেন সেখানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শেষ পর্যন্ত পুরনো সংসদ সদস্যদেরই বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। চাঁদপুরে দুটি আসনে মনোনয়ন পরিবর্তন হয়েছে। একসময়ের দাপুটে নেতা ও মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং সংসদ সদস্য শামসুল হক ভূঁইয়া মনোনয়ন পাননি। তাঁদের আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন যথাক্রমে নুরুল আমিন রুহল ও শফিকুর রহমান। তবে চাঁদপুর-১ আসনে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক মন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীর। বাদ পড়েছেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন।

শেষ পর্যন্ত নিজের শ্বশুরবাড়ির এলাকা রংপুর-৬ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না শেখ হাসিনা। আসনটি তিনি স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে ছেড়ে দিয়েছেন।

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। অসুস্থ অবস্থায় বিদেশে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আশরাফের আসনে বিকল্প প্রার্থী রেখেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গতকাল সৈয়দ আশরাফকেই নৌকা প্রতীক বরাদ্দের চিঠি দেওয়া হয়েছে। সৈয়দ আশরাফের ছোট ভাই আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয় থেকে প্রতীক বরাদ্দের চিঠি সংগ্রহ করেন।

১৪ দলের শরিকদের জন্য ১৩টি আসন ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ; যদিও শরিকরা আরো কয়েকটি আসনের জন্য আওয়ামী লীগকে চাপ দিয়ে আসছিল। সম্ভাব্য মহাজোটের সমীকরণে সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টকে তিনটি আসন ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ তিনটি আসনই পেয়েছে যুক্তফ্রন্টের প্রধান শরিক বিকল্পধারা। দলের মহাসচিব আব্দুল মান্নান, যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় নেতা এম এম শাহীন নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা যায়, জাতীয় পার্টির সঙ্গে বিশেষ সমঝোতার কারণে তাদের কোন কোন আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করছে না আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যাঁরা পেয়েছেন তাঁরা আজকের মধ্যেই প্রতীক বরাদ্দের চিঠি পেয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেন, দল থেকে যাঁরা মনোনয়ন পেয়েছেন আগামীকালের মধ্যেই তাঁরা চূড়ান্ত চিঠি পেয়ে যাবেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অনেক দিন ধরে ক্ষমতায় আছে। দলের অনেক প্রার্থী, এর মধ্য থেকে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা খুবই কঠিন কাজ। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সাত বছর ধরে সার্ভে রিপোর্ট এবং তা ছয় মাস পর পর হালনাগাদ করার জন্য দলের মনোনয়নপ্রক্রিয়া শেষ করা সহজ হয়েছে।’

কাদের বলেন, জরিপের ফলাফল মনোনয়নে মূল ভূমিকা পালন করেছে। প্রার্থী মনোনয়নে প্রার্থীর জনপ্রিয়তা ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। জরিপের বাইরেও বিভিন্নভাবে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল দলের এবং জোটের মনোনয়নপ্রক্রিয়া শেষ করা। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সফলভাবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নয়, প্রতিপক্ষ বিএনপি ও অন্যান্য দলের প্রার্থীদের বিষয়েও জরিপ করেছি। আর এ জন্যই শুধু আমাদের নয়, অন্যান্য দলের অবস্থান সম্পর্কেও আমরা জানতে পেরেছি। সব বিবেচনা করে দলের সংসদীয় বোর্ড দলীয় মনোনয়ন প্রদান করেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের শরিকদের সঙ্গেও বোঝাপড়া ও সমঝোতা হয়ে গেছে। মনোনয়ন নিয়ে তাদের সঙ্গে কোনো টানাপড়েন দেখতে পাইনি। বারবার আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আর সে জন্যই ভালো মনোনয়ন দিতে পেরেছি।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নির্বাচন এলেই দেশে পুরনো অভিযোগ মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এ বাণিজ্য আওয়ামী লীগ সফলভাবে প্রতিরোধ করতে সমর্থ হয়েছে। এটি আমাদের জন্য বড় ধরনের স্বস্তিদায়ক হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা মনোনয়নপ্রক্রিয়ায় যে কৌশল অবলম্বন করেছেন, তাতে এ প্রক্রিয়ায় লেনদেনের কোনো ফাঁকফোকর ছিল না। এটি দলের জন্য একটি বড় বিষয়। নির্বাচন সামনে রেখে যাঁদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তাঁদের বেশির ভাগই রাজনীতিবিদ। ব্যবসায়ী মাত্র ১৬ থেকে ১৭ জন, ৩৭ থেকে ৩৮ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং নতুন মুখ প্রায় ৫০ জন, যাঁরা অতীতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন।’

কাদের বলেন, ‘তবে আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। দীর্ঘদিন ধরে দল ক্ষমতায় রয়েছে। তাই দু-এক জায়গায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকতে পারে। কারণ দলের জনপ্রিয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও জোটের জন্য ছাড় দিতে হয়েছে। আশা করি, জোটের স্বার্থে তাঁরা মেনে নেবেন।’

ওবায়দুল কাদের গতকাল দুপুরে আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে ঢাকার দুই মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক যৌথ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।