ঢাকা, এপ্রিল ২০, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০৮:৫৪:৫৯

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র পুনর্বাসন না করে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা হবে না: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি হিসেবে ফের নিয়োগ পেলেন বিপ্লব বড়ুয়া সংসদ অধিবেশন উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ আপিলে দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৫১ জন নির্বাচনে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি সেনাবাহিনী চায় ইসি : পিএসও আদালত আবমাননায় বিচারক সোহেল রানার সাজার বিরুদ্ধে আপিলের রায় ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর ২১টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৪ জন গ্রেফতার : ডিএমপি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কিনা, জানালেন ইসি

জমজ বাচ্চাদের একজনকে পেটে রেখেই সেলাই

| ১১ কার্তিক ১৪২৪ | Thursday, October 26, 2017

খাদিজা আক্তার (১৯) আজ থেকে ঠিক ৩৫ দিন আগে কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার একটি ক্লিনিকে মা হন। মা হওয়ার মধুর স্বাদ গ্রহণ করলেও খাদিজার জীবনে ঘটে গেছে এক ভয়ানক ঘটনা। খাদিজার একটি বাচ্চা পৃথিবীর আলো দেখলেও আরেকটি বাচ্চা রয়ে যায় তার গর্ভে। সেই বাচ্চাটিকে পেটে রেখেই চিকিৎসকরা খাদিজার পেট সেলাই করে দেন।

এরপর থেকেই খাদিজার পেট ফোলা এবং পেটে ব্যাথা শুরু হয়। গত ২১ অক্টোবর আলট্রাসনোগ্রাফিতে ধরা পড়ে: তার একটি বাচ্চা পেটে মৃত অবস্থায় রয়েছে। দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রফেসর ডা. নিলুফার সুলতানার তত্ত্বাবধানে অপারেশন করে খাদিজার মৃত বাচ্চাটি পেট থেকে বের করা হয়। তারপরও খাদিজা শঙ্কামুক্ত নন। পুরোপুরি সুস্থ হতে চার থেকে ছয়মাস পর্যন্ত সময় লাগবে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

নিলুফার সুলতানা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: গত ২২ অক্টোবর রাত প্রায় দেড়টার  দিকে পেটে ব্যাথা ও ভারি পেট নিয়ে খাদিজা ভর্তি হন। ভর্তি হওয়ার পর তার পরীক্ষা করে দেখা যায়, ৩৫ দিন আগে তার একটি অপারেশন হয়েছে। আল্ট্রসনোতে পেটের ভেতর একটি মৃত বাচ্চাও দেখা যায়। জরুরি বিভাগে ভর্তির পর ডাক্তাররা জানতে পারেন, এক মাসেরও বেশি সময় আগে খাদিজা দাউদকান্দির একটি ক্লিনিকে সুস্থ বাচ্চার জন্ম দেন। তবে এরপর থেকেই তার পেটে ব্যাথা ও পেট ভারী হতে থাকে।

কেন এরকম ঘটল যে জমজ বাচ্চা দুটির একজনের জন্ম হলো, আরেকজন পেটের ভেতর রয়ে গেলো! চিকিৎসকরাই কীভাবে ওই বাচ্চা রেখে পেটে সেলাই দিলেন?

প্রফেসর ড. নিলুফার সুলতানা

ডা. নিলুফার সুলতানা বলেন: ব্যাপারগুলো আমাদের ডাক্তাররা পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান যে, এর কারণ জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ। চিকিৎসার ভাষায় এটিকে বলা হয় এবডোমিনাল গর্ভধারণ। জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ হলে অপারেশন করার আগে আমাদের অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হয়। কারণ মৃত বাচ্চাটি এতোদিন থাকার পর রক্ত পরিবর্তন হয়েছে কিনা। অপারেশনে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হবে কিনা।

‘কাজগুলো করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। অপারেশন করার আগে রোগীকে দু’দিন নতুন রক্ত দেওয়া হয়। এরপর পরিবারের সঙ্গে বসে আমরা সিদ্ধান্ত নেই খাদিজার পেট থেকে মৃত বাচ্চাটি বের করবো।’

কিন্তু এই অপারেশনে কিছু সমস্যাও হতে পারতো।

তিনি বলেন: গর্ভধারণে যেহেতু জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ, বড় একটি বাচ্চা মৃত, কিন্তু সত্য হলো এই বাচ্চাটি এতোদিন বেঁচে ছিল।  যদি বিপজ্জনক জায়গায় থাকে তাহলে কিন্তু ফুলটা বের করা যায় না বা বের করতেও হয় না। এমন পরিস্থিতিতে ফুলটা আমরা ভেতরে রেখেই গত বুধবার খাদিজার অপারেশন করি। কোন সময় ফুল ভেতরে থেকে অনেক সমস্যায় ফেলতে পারে। সেগুলোই আমরা খাদিজার পরিবারকে জানিয়েছি। সবার সহযোগিতায় আমরা খুব সুন্দরভাবে খাদিজার অপারেশনটি করতে পেরেছি। মৃত বাচ্চাটি পেট থেকে বের করেছি।

খাদিজা এখনও শঙ্কামুক্ত নন। তবে, অপারেশনের পর থেকে তিনি কিছুটা ভালো আছেন। যদি পেটে তার ফোঁড়া বা খাদ্যনালীতে কোনো সমস্যা হয় তাহলে তাকে নতুনভাবে চিকিৎসা দেওয়া হবে।

খাদিজার যে সমস্যাটি হয়েছে এটি কি চিকিৎসকের গাফিলতির জন্য?

এমন প্রশ্নে নিলুফার সুলতানা বলেন: চিকিৎসকের কোন গাফিলতি ছিল না। কারণ খাদিজার গর্ভে একটি বাচ্চা জরায়ুর ভেতরে ও একটি বাচ্চা জরায়ুর বাইরে বড় হয়েছে। এটি একটি বিরল ঘটনা।

‘ওই চিকিৎসক যখন অপারেশন করেছেন, ওই মুহূর্তে তিনি একটা বাচ্চাই পেয়েছেন। একটা বাচ্চাই তিনি বের করেছেন। জরায়ুর ভেতরে আরেকটি বাচ্চা থাকা অবস্থায় কখনোই উনি বাচ্চা রেখে আসতে পারতেন না ও জরায়ু সেলাই করতেন না। মৃত ওই বাচ্চাটি জরায়ুর বাইরে এমন চেহারায় ছিল যে সেটি দেখে বোঝার উপায় ছিল না। আর ওই অবস্থায় চিকিৎসক সেটা না ধরে বরং ভালো করেছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজে ২১২ নং ওর্য়াডে চিকিৎসা নেওয়া খাদিজার পাশে রয়েছেন তার বাবা-মা। মেয়ের এই অবস্থায় বাবা-মা কোনো কথা বলতে পারছেন না। খাদিজার দেবর হেলাল চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ডাক্তাররা বলেছেন, ভাবি এখন সুস্থ আছে। পুরোপুরি সুস্থ হতে নাকি অনেকদিন লাগবে।