ঢাকা, এপ্রিল ২০, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০০:১০:৩১

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র পুনর্বাসন না করে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা হবে না: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি হিসেবে ফের নিয়োগ পেলেন বিপ্লব বড়ুয়া সংসদ অধিবেশন উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ আপিলে দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৫১ জন নির্বাচনে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি সেনাবাহিনী চায় ইসি : পিএসও আদালত আবমাননায় বিচারক সোহেল রানার সাজার বিরুদ্ধে আপিলের রায় ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর ২১টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৪ জন গ্রেফতার : ডিএমপি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কিনা, জানালেন ইসি

জনসংখ্যার ভিত্তিতে সংসদে সংখ্যালঘুদের আসন চাই রানা দাশগুপ্ত

| ১ ভাদ্র ১৪২২ | Sunday, August 16, 2015

Prothom Alo

তথ্যসূত্র-প্রথম আলো

বিশেষ সাক্ষাৎকার : রানা দাশগুপ্ত
জনসংখ্যার ভিত্তিতে সংসদে সংখ্যালঘুদের আসন চাই
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান | আপডেট: ০১:৩৫, আগস্ট ১৬, ২০১৫ | প্রিন্ট সংস্করণ
বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও সম্পত্তি জবরদখলের প্রেক্ষাপটে গত শুক্রবার চট্টগ্রামে তাঁর এই সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান
প্রথম আলো : বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কেমন আছে?

রানা দাশগুপ্ত : নিরাপত্তার দিক থেকে বলব, তারা ভালো নেই। তাদের ওপর ভয়ভীতি, অত্যাচার-নির্যাতন চলছে। বিশেষ করে, ২০১২ সালের শুরু থেকে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি একাত্তরের মতোই সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে, তাদের ঘরবাড়ি ও উপাসনালয়ে হামলা করেছে। সে সময়ে সরকার, প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের কাছ থেকে যে প্রতিরোধ ও প্রতিকার আশা করেছিলাম, সেটি পাইনি। নীলফামারীতে আসাদুজ্জামান নূর কিংবা দিনাজপুরে ইকবালুর রহিমের মতো দু-একজন ব্যতিক্রম ছাড়া কেউ আক্রান্তদের রক্ষায় এগিয়ে আসেননি।

প্রথম আলো : কিন্তু বিএনপি-জামায়াত তো এখন কোণঠাসা। তাহলে কারা সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালাচ্ছে?

রানা দাশগুপ্ত : বিএনপি-জামায়াত কোণঠাসা, এ কথা ঠিক। কিন্তু সাম্প্রতিক ব্লগার হত্যার ঘটনা বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখি, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরই বেছে বেছে টার্গেট করা হচ্ছে। আর এর সঙ্গে মৌলবাদী জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী জড়িত।

প্রথম আলো : বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও তাদের সম্পত্তি দখলের সঙ্গে কয়েকজন সাংসদ-মন্ত্রীও জড়িত আছেন বলে আপনারা সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন। প্রকৃত ঘটনা কী?

রানা দাশগুপ্ত : এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকতে সেই দলের সাংসদ ও প্রভাবশালীদের দ্বারা সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর বা সম্পত্তি দখলের ঘটনা ঘটছে। আমরা আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। আসলে সাতচল্লিশের পর থেকেই সংখ্যালঘু নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়া চলে আসছে।

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যারাই ক্ষমতায় এসেছে, তারা সংখ্যালঘুদের প্রতি চরম বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে। ১৯৯০, ১৯৯২ ও ২০০১ সালে সংখ্যালঘুদের ওপর ভয়াবহ হামলা হয়েছে। ২০০১ সালে ক্ষমতার পালাবদলের পর বিএনপির ছত্রচ্ছায়ায় জামায়াতে ইসলামী এ কাজটি করেছে অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে। তাদের যে রাজনৈতিক দর্শন, সেখানে সংখ্যালঘুদের জায়গা নেই। উদ্বেগের বিষয় হলো, সংখ্যালঘুদের ওপর এই যে নির্যাতন চলছে, এর বিচার হচ্ছে না। বলা যায়, দায়মুক্তির সংস্কৃতি চলছে।

প্রথম আলো : সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে আপনারা ফরিদপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁওয়ের ঘটনার প্রতিকার চেয়েছেন, আবার স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা তার প্রতিবাদ করেছেন, কর্মসূচি পালন করছেন?

রানা দাশগুপ্ত : দিনাজপুরে ঘটনাটির কোনো প্রতিক্রিয়া পাইনি। গাইবান্ধার সাংসদ ও হুইপ মাহবুব আরা গিনি কিন্তু স্বীকার করেছেন, সেখানে রামকৃষ্ণ মিশনের জমির গাছ কেটে দেয়াল দেওয়া হয়েছে। পিরোজপুরের ঘটনায় স্কুলশিক্ষকদের ও হিন্দু নেতাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ঢাকায় আনা হয়েছে। পিরোজপুর নিবাসী জগন্নাথ হলের ছাত্রদেরও সাংসদের পক্ষে মানববন্ধনে যোগ দিতে বলা হয়েছিল। তাঁরা যাননি। আর ফরিদপুরের ঘটনায় মন্ত্রীর পক্ষে বিবৃতিতে যাঁরা সই দিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকে পরে ঢাকায় পালিয়ে এসেছেন। তাঁরা স্বেচ্ছায় সই দেননি, দিতে বাধ্য হয়েছেন। মন্ত্রীও স্বীকার করেছেন, বাড়িটি তাঁর দখলে আছে। আমরা বলেছি, জোরপূর্বক বায়না দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, ন্যায্যমূল্যে কিনেছেন। কিন্তু বাড়িটিতে যে মন্দির ছিল, সেটি ধূলিসাৎ করা হয়েছে। আর বাড়ির মালিক অরুণ গুহ মজুমদার, যাঁকে মন্ত্রী ১৭ বছর আগলে রাখলেন, যিনি জীবনে কখনো ফরিদপুরের বাইরে যাননি, তিনি কেন বাড়িটা বিক্রি করেই ভারতে চলে গেলেন? আসলে তিনি যেতে বাধ্য হয়েছেন।

প্রথম আলো : সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বলে পরিচিত আওয়ামী ওলামা লীগ সমাবেশ করে বলেছে, পুলিশসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে আনুপাতিক হারের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যায় সংখ্যালঘুদের পদায়ন করা হয়েছে। এতে সংখ্যাগুরু মুসলমানরা বঞ্চিত হচ্ছেন। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

রানা দাশগুপ্ত : বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজনকে প্রধান বিচারপতি পদে বসানো হয়েছে। অথচ ভারতে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি থেকে অনেক উচ্চপদে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা আসীন ছিলেন এবং আছেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত আগ্রহে যেমন এটি হয়েছে, তেমনি প্রধান বিচারপতি যেদিন পদায়ন পেয়েছেন, সেদিনই ওলামা লীগ সমাবেশ করে এর বিরোধিতা করেছে। এখন তারা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে। আবার এই সংগঠনের সভা-সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও যান। যে কথাগুলো মৌলবাদী ডানপন্থীরা বলতে পারছে না, ওলামা লীগ সেটিই বলছে। তাদের এসব তৎপরতা মৌলবাদীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পাঁচ দফা চুক্তির কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়, যাতে শরিয়াহ আইন চালুর কথা বলা হয়েছিল। এখন আওয়ামী লীগকেই পরিষ্কার করতে হবে, তারা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়, না ওলামা লীগের দাবি অনুযায়ী ধর্মরাষ্ট্র? দুটো তো একসঙ্গে চলে না। ৬৮ বছর ধরেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা বঞ্চিত। মেধা ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাদের উপযুক্ত পদ দেওয়া হয়নি। তাই বর্তমান সরকারের আমলে যখন যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে কিছু ক্ষেত্রে (সব ক্ষেত্রে নয়) সংখ্যালঘুদের পদায়ন করা হচ্ছে, তখনই অন্ধকারের শক্তি শোরগোল তুলছে।

প্রথম আলো : ১৯৭১ সালে যেখানে দেশে সংখ্যালঘুদের হার ছিল ২০-২১ ভাগ, সেখানে বর্তমানে ৯.৭-এ নেমে আসার কারণ কী? সব সরকারের আমলেই সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগের ঘটনা ঘটেছে?

রানা দাশগুপ্ত : না, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগের ঘটনা ঘটেনি। ঘটেছে পঁচাত্তরের পর সামরিক শাসনামল থেকে। এটি সংখ্যালঘু নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়া, যা এখনো চলছে। ১৯৭৪ সালের ২৩ মার্চ পার্লামেন্টে আইন করে অর্পিত সম্পত্তি আইন রহিত করা হলেও পঁচাত্তরের পর জিয়াউর রহমান সেটি পুনরুজ্জীবিত করেন। এরপর থেকে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, জমিজমা দখল ও উৎখাতের ঘটনা বাড়তে থাকে। আর এই দখল প্রক্রিয়ায় বিএনপি, জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ—সব দলের নেতারাই আছেন। অর্পিত সম্পত্তি দখল নিয়ে অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাতের বই-ই তার সাক্ষী।

সরকারি হিসাবে আজ বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের হার ৯.৭ শতাংশ। তবে পাকিস্তান আমল থেকে সংখ্যালঘুদের হার কম দেখানো হচ্ছে। পাহাড়েও একই ঘটনা ঘটছে। ২০০৮ সালে যখন নির্বাচন হয়, তখন দেখা যায়, নতুন ভোটারদের ৭০-৮০ শতাংশই সংখ্যালঘু। জোট সরকারের আমলে তাদের ভোটার করা হয়নি, যদিও ১ কোটি ২০ লাখ ভুয়া ভোটার বানানো হয়েছিল। প্রথম আলোতে আপনারাই রিপোর্ট করেছেন, গত ১০ বছরে নয় লাখ হিন্দু কমেছে। অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোক যেখানে বেড়েছে, সেখানে হিন্দু জনসংখ্যা কমে যাওয়ার কারণটি পরিষ্কার। জোট আমলের মতো না হলেও সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগের ঘটনা এখনো ঘটছে। কারণ নিরাপত্তাহীনতা। এটি চলতে থাকলে যে আদর্শের ভিত্তিতে বাংলাদেশ হয়েছে, সেই আদর্শ থাকবে না, তাই আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দলের কাছে আমরা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে দেশ পরিচালনার আহ্বান জানাচ্ছি, যেখানে সব ধর্মের ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষ সম–অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বসবাস করতে পারবে।

প্রথম আলো : বিএনপি-জামায়াতকে আপনারা সাম্প্রদায়িক দল মনে করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় কতটা আন্তরিক?

রানা দাশগুপ্ত : আসলে বিএনপি-জামায়াত শুরু থেকেই পলিটিকস অব এক্সক্লুশন (বাইরে রাখার রাজনীতি) করে এসেছে। অনেকে বিএনপি ও ভারতের বিজেপির রাজনীতিকে এক করে দেখছেন। কিন্তু বিজেপি তাদের মুখপাত্র করেছে একজন সংখ্যালঘুকে (এম জে আকবর)। বিএনপি কি তা করবে? করবে না। আমরা দুঃখের সঙ্গে বলছি, বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত কোনো দলই সংখ্যালঘুদের সমস্যাটি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি। কেউ ভেবে দেখেনি সংখ্যালঘুরা হারিয়ে যাচ্ছে কেন? এই সমস্যাটি নিয়ে পার্লামেন্টেও কখনো আলোচনা হয়নি।

প্রথম আলো : ক্ষমতাসীনদের ওপর সংখ্যালঘুরা ভরসা রাখতে পারছে কি?

রানা দাশগুপ্ত : না, তারা ভরসা রাখতে পারছে না। তবে রাখতে চাইছে। এ কারণেই আমরা বলতে চাই যে সংখ্যালঘুদের নিছক ভোটার হিসেবে দেখবেন না। তারাও যাতে মানবিক মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারে, সেদিকে নজর দিন।

প্রথম আলো : বিএনপি-জামায়াত আমলে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার হলে আপনারা যেভাবে সোচ্চার হতেন, এখন সেভাবে সোচ্চার নন।

রানা দাশগুপ্ত : কথাটি ঠিক নয়। আমরা বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ করছি। সভা-সমাবেশ করছি। কিন্তু গণমাধ্যমে সেসব খবর তেমন আসে না। সংখ্যালঘুদের দাবিদাওয়া নিয়ে আমরা আগামী ২৭ নভেম্বর বেলা একটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক লাখ লোকের মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই সমাবেশ থেকে আমরা কেবল প্রতিবাদই জানাব না, সংখ্যালঘুদের পক্ষে জাতীয় ঐকমত্যের দাবি পেশ করব।

প্রথম আলো : কী থাকবে সে দাবিনামায়?

রানা দাশগুপ্ত : ১৯৫৪ সালে ৩০০ আসনের ৭২টি ছিল সংখ্যালঘুদের। সত্তরের নির্বাচনেও সংখ্যালঘুদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আসন ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে সংসদে ও দলীয় কাঠামোয় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব কমতে থাকে। তাই আমরা সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের দাবিকে সামনে নিয়ে আসব। জনসংখ্যার ভিত্তিতে সংসদে সংখ্যালঘুদের আসন সংরক্ষিত থাকতে হবে। তবে সেটি পৃথক নির্বাচনের মাধ্যমে নয়, যুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যেভাবে নারী কমিশনারদের ভোট নেওয়া হয়, সেভাবেই সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যায়।

প্রথম আলো : আপনারা আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক হচ্ছেন কেন?

রানা দাশগুপ্ত : আমরা কোনো দলের ভোটব্যাংক হতে চাই না। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের পলিটিকস অব এক্সক্লুশনই আমাদের ওদিকে ঠেলে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ অন্তত পলিটিকস অব ইনক্লুশনের বা অন্তর্ভুক্তির রাজনীতির কথা বলে। আমরা বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও সমাজে ন্যায্য অধিকার নিয়ে থাকতে চাই। কারও করুণাপ্রার্থী হতে চাই না।

প্রথম আলো : সংখ্যালঘুদের ওপর এ পর্যন্ত যেসব অত্যাচার, নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, তার বিচার হয়েছে কি?

রানা দাশগুপ্ত : সার্বিকভাবে বলতে গেলে হয়নি। গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী ও জ্ঞানজ্যোতি ভান্তের ঘাতকেরা ছাড়া কেউ শাস্তি পায়নি। ২০০২ সালে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে যে ১১ জন সংখ্যালঘুকে পুড়িয়ে মারা হলো, তারও বিচার হয়নি। রামুর ঘটনায়ও কেউ শাস্তি পায়নি। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে সংখ্যালঘুদের ওপর সংঘটিত তাণ্ডবের পরিপ্রেক্ষিতে সাহাব উদ্দিন কমিশন গঠিত হয়। ওই কমিশন কতিপয় সুপারিশসহ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে রিপোর্ট জমা দিলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। সরকার দোষীদের বিচার করার কথা বললেও আজ পর্যন্ত কারও বিচার হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হলে স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি এক হয়ে যায় এবং তথাকথিত শান্তি সভা করে আক্রান্তকে মামলা করতে নিবৃত্ত করে। থানা-পুলিশও নিষ্ক্রিয় থাকে। এভাবে রাজনৈতিক দল ও প্রশাসন এককাট্টা হলে সংখ্যালঘুদের দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কী করার আছে?

প্রথম আলো : ২০০৯ সালের সরকারে সংখ্যালঘুদের মধ্য থেকে একাধিক পূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন। বর্তমানে একজনও নেই।

রানা দাশগুপ্ত : এটি দুর্ভাগ্যজনক যে এই সরকারে একজনও পূর্ণ মন্ত্রী নেই। যদি আড়াই কোটি মানুষকে বিবেচনায় নেওয়া হয়, তাহলে অন্তত পাঁচজন পূর্ণ মন্ত্রী থাকার কথা। এটি হচ্ছে সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য। এ প্রসঙ্গে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মন্ত্রিত্ব হারানোকে ষড়যন্ত্রের অংশ
বলে মনে করি। তিনি একজন দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান। শেয়ারবাজারসহ নানা কেলেঙ্কারি ও দলের বিচ্যুতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। যাঁদের বিরুদ্ধে এসব কথা গিয়েছে, তাঁরাই তাঁকে সরানোর জন্য কল্পকাহিনি সাজিয়েছেন।

প্রথম আলো : আপনাকে ধন্যবাদ।

রানা দাশগুপ্ত : ধন্যবাদ।
http://www.prothom-alo.com/opinion/article/603814/জনসংখ্যার-ভিত্তিতে-সংসদে-সংখ্যালঘুদের-আসন-চাই