ঢাকার উত্তরায় আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার (যুগ্ম জেলা দায়রা জজ) বাসায় ১ বছর ৩ মাস আটক রেখে খাদিজা (১২) নামে এক গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকায় জাতীয় আইন সহায়তা প্রদান সংস্থার উপ-পরিচালক (প্রশাসন) রকিবুল ইসলাম ও তার স্ত্রী শামীমা ইসলামের বাসায় রেখে শিশুটিকে নির্যাতন করেন।
ক্ষতচিহ্ন নিয়ে মাগুরায় নিজের বাড়িতে পালিয়ে যাওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা শনিবার শিশুটিকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
শিশুর বাড়ি মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার বাগডাঙ্গা গ্রামে। সে সলেমান সর্দার ও মা ডালিম বেগমের মেয়ে।
শিশুটির মা ডালিম বেগম বলেন অভাব-অনটনের কারণে ১ বছর ৩ মাস আগে প্রতিবেশী আবুল বাশারের মাধ্যমে ঢাকায় বিচারক রকিবুল ইসলামের বাসায় মাসিক এক হাজার টাকা চুক্তিতে কাজ করতে পাঠান।
তার পর থেকে মেয়ের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। রকিবুল ও তা স্ত্রীর মোবাইলে ফোন করলেও তারা কখনো ফোন ধরতেন না।
প্রতিবেশী আবুল বাশারের কাছে মেয়ের খোঁজ নিতে গেলে তিনি শুধু বলতেন, ‘খাদিজা ভালো আছ’।
এ ভাবে ১৫ মাস যোগাযোগহীন অবস্থায় থাকার পর খাদিজা অসুস্থ অবস্থায় পালিয়ে শনিবার ভোরে বাড়ি ফেরে।
খাদিজা সাংবাদিকদের জানায়, কাজে যোগ দেওয়ার পর থেকে উত্তরায় রকিবুলের ও বসুন্ধরায় তার শ্বশুরের বাসায় তাকে রান্না ছাড়া সব ধরনের কাজ করতে হত।
রকিবুল ও তার স্ত্রী নানা অজুহাতে প্রতিদিন তাকে চড়, থাপ্পড়, শরীরে গরম খুনতির ছ্যাঁকা ও গরম পানি ঢেলে নির্যাতন করত।
দিনে একবেলা খেতে দিত, তাও পচা-বাসি খাবার। অসুস্থ হলে তার চিকিৎসা করতো না। নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে বৃহস্পতিবার রাতে উত্তরার বাসার গার্ডকে ১০ টাকা দিয়ে একটি পাউরুটি কেনার জন্য পাঠিয়ে কৌশলে আমি পালিয়ে আসি।
প্রায় ২ মাস আগে রকিবুলের স্ত্রী শামীমা ইসলাম বটি ও ছুরি দিয়ে আঘাত করে বলে অভিযোগ করে হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতচিহ্ন দেখিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে শিশুটি। পরে শুক্রবার রাতে পুলিশের সহায়তা নিয়ে বাসে করে শনিবার ভোরে সে বাড়ি পৌঁছে।
মাগুরা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক মোহাইমানুল হক বলেন, খাদিজার শরীরের ওল্ড ইনজুরি আছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা দেখে তার শারীরিক অবস্থার ব্যাপারে জানাবেন।
সদর থানার এসআই তৌহিদুর রহমান বলেন, মেয়েটি (খাদিজা) হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় তিনি রকিবুল ইসলামের সঙ্গে ফোন করে ঘটনা জানতে চান।
তখন রকিবুল বলেন, আমি ঢাকার বাইরে আছি। শুনেছি বাসার কাজের মেয়েটা পালিয়েছে। বাসার ঘটনার বিষয়ে এখন কিছু বলতে পারছি না। পরে বারবার যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
সদর থানার ওসি মুন্সি আছাদুজ্জামান বলেন, শিশুটির শরীরের নতুন কোনো নির্যাতনের চিহ্ন নেই। তবে পুরাতন দাগ রয়েছে। নির্যাতনের বিষয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
তিনি আরো বলেন, যেহেতু এখন পর্যন্ত তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। যদি লিখিত অভিয়োগ পাওয়া যায় তাহলে তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।