ঢাকা, এপ্রিল ২৬, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০৩:১৪:৫৯

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র পুনর্বাসন না করে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা হবে না: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি হিসেবে ফের নিয়োগ পেলেন বিপ্লব বড়ুয়া সংসদ অধিবেশন উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ আপিলে দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৫১ জন নির্বাচনে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি সেনাবাহিনী চায় ইসি : পিএসও আদালত আবমাননায় বিচারক সোহেল রানার সাজার বিরুদ্ধে আপিলের রায় ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর ২১টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৪ জন গ্রেফতার : ডিএমপি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কিনা, জানালেন ইসি

জঙ্গিদের বিরুদ্ধে করা ৩৫০ মামলার একটিও নিষ্পত্তি হয়নি

| ৮ শ্রাবণ ১৪২২ | Thursday, July 23, 2015

বিভিন্ন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গত পাঁচ বছরে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা ৩৫০টি মামলার একটিরও বিচার নিষ্পত্তি হয়নি। ঢাকার বিভিন্ন থানায় ৩৫০টিসহ এই আইনে পাঁচ বছরে মোট ৩৬৫টি মামলা হয়েছে। বাকি ১৫টি মামলা হয়েছে সাত পাকিস্তানি নাগরিক এবং বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের বিরুদ্ধে।

আইনজীবীসহ আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, এই আইনে মামলা দায়ের করা থেকে শুরু করে তদন্ত, অভিযোগপত্র দাখিল এবং তা আদালতে আমলে নেওয়া পর্যন্ত—এই চার ধাপে চার দফা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন হয়। এই প্রক্রিয়ার কারণে দীর্ঘ সময় চলে যায়।
বিচার শুরুর পর সরকারি কৌঁসুলিদের গাফিলতির কারণেও মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘ সময় লাগছে বলে অভিযোগ আছে। ২০১২ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১১৮টি মামলার অনুমোদন দেয়। এরপর মামলাগুলোর একটিরও বিচার শেষ হয়নি।
অবশ্য ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল্লাহ আবু দাবি করেন, মামলার বিচার কার্যক্রমে সরকারি কৌঁসুলিদের কোনো গাফিলতি নেই। তিনি বলেন, ঠিকভাবে সাক্ষী না আসায় বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন মামলাগুলোর একের পর এক তারিখ পড়ছে। আর সাক্ষী আনার দায়িত্ব পুলিশের।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত ও তথ্য প্রসিকিউশন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে সন্ত্রাসবিরোধী আইন পাস হওয়ার পর রাজধানীর ৪০টি থানায় মোট ৩৬৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫০টি মামলা হয়েছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও হিযবুত তাহ্রীরের বিরুদ্ধে। এসব মামলায় জেএমবির ১৫৩ জন ও হিযবুত তাহ্রীরের ২১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বাকি ১৫ মামলার মধ্যে আটটি মামলা হয়েছে সাদেক হোসেন খোকা ও হাবিবুন নবী খানসহ বিএনপির ২৫ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে হয়েছে চারটি এবং সাতজন পাকিস্তানি নাগরিকের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে।
এর মধ্যে ২০১২ সালের ১০ ডিসেম্বর ১১৮টি মামলার অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ার অনুমোদন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারপর ঢাকা মহানগর দায়রা জজের অধীন বিভিন্ন আদালতে এসব মামলার বিচার শুরু হয়। এখন পর্যন্ত একটিরও বিচার শেষ হয়নি।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, যেসব মামলায় ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন হয়েছে, সেগুলোর বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নিতে সরকারি কৌঁসুলিদের নির্দেশনা দেওয়া হবে।
নথিপত্রে দেখা যায়, গত বছরের বিভিন্ন সময়ে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের তৎকালীন বিচারক জহুরুল হক আরও ১৩৩ মামলার অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ার জন্য অনুমোদন চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠান। এর মধ্যে চলতি বছর তিনটি মামলার অনুমোদন আসে। এ তিন মামলা বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। বাকি ১৩০টি মামলার অনুমোদন এখন পর্যন্ত না আসায় বিচার শুরু করা যাচ্ছে না বলে আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘যখনই আমাদের কাছে অনুমোদনের জন্য আসে, তখনই দিয়ে দিই। প্রতিদিনই এমন দু-একটা অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।’
অভিযোগপত্র আমলে নিতে ১৩০টি মামলার অনুমোদন এখনো অপেক্ষমাণ থাকার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অনুমোদনের জন্য পাঠানোর ক্ষেত্রে কোথাও যদি প্রক্রিয়াগত ত্রুটি হয়, সেগুলোর ক্ষেত্রে হয়ত আমাদের কাছে আসতে দেরি হতে পারে। তারপরও বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব।’
পুলিশের অপরাধ তদন্ত ও তথ্য প্রসিকিউশন বিভাগ জানায়, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা আরও ৪০টি মামলার তদন্ত ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন চাওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। বাকি মামলাগুলো তদন্তাধীন আছে।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি কাজী নজিবুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৯ সালে সন্ত্রাসবিরোধী আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হয়। এই আইনে মামলা দায়ের, তদন্ত ও অভিযোগপত্র দাখিলের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয় পুলিশকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদিত ওই অভিযোগপত্র আমলে নিতে আবার একই মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিতে হয় আদালতকে। এই বিধানের মাধ্যমে বিচারকের ক্ষমতাকে খর্ব করা হয়েছে বলে এই আইনজীবী মনে করেন।
কাজী নজিবুল্লাহ আরও বলেন, সাধারণত কোনো মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়ার পর তা গ্রহণ করা না-করা আদালতের এখতিয়ার। কিন্তু এই আইনে তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা রাখা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের হাতে। তার ওপর চার ধাপে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে গিয়ে মামলার বিচারের জন্য প্রস্তুত হতেই অনেক সময় পেরিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়টি স্বীকার করেছেন আইনমন্ত্রীও। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মুহূর্তে আইনটি সংশোধন করতে হলে তা আবার মন্ত্রিসভায় তুলতে হবে। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ কারণে মামলার বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এই পর্যায়ে আইন সংশোধন না করে মামলাগুলোর বিচারকাজ শেষ করা দরকার।