ঢাকা, এপ্রিল ২০, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১০:১৩:১২

চাষাড়া আ’লীগ অফিসে বোমা হামলা মামলায় চার্জ গঠন

| ২২ আষাঢ় ১৪২২ | Monday, July 6, 2015

বিগত ২০০১ সালে নারায়ণগঞ্জ চাষাড়া আওয়ামীলীগ অফিসে বোমা হামলার মামলায় চার্জ গঠন করেছে আদালত। সোমবার দুপুরে ২নং অতিরিক্ত দায়রা ও জেলা জজ মিয়াজী শহিদুল আলম চৌধুরীর আদালত চার্জ গঠন করে আগামী ২ আগষ্ট পরবর্তী শুনানীর দিন ধার্য্য করেন।
৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিলেও চার্জ গঠনের সময় আদালতে ৩জন উপস্থিত ছিলেন। এরা হলেন মুফতি হান্নান, জুয়েল ও  নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ১২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু। বাকী দুইজন মোরসালীন ও মুত্তাকীন ভারতের কারাগারে বন্দি রয়েছে। অপরজন হচ্ছেন ওয়াদুজ্জামান। এদের মধ্যে শকু উক্ত মামলায় জামিনে আছেন।
এর আগে সকালে কঠোর নিরাপত্তায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জঙ্গী মুফতি হান্নান ও জুয়েল কে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে আনা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত কৌসলী( পিপি ) ফজলুর রহমান লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে বোমা হামলা মামলার সম্পূরক চার্জশীট আদালতে জমা দেয়া হয়েছিল। আজ সোমবার আদালত চার্জ গঠন করে আগামী ৩ আগষ্ট স্বাক্ষীদের হাজিরার জন্য পরবর্তী দিন ধার্য্য করেছেন।
মামলার বাদী মহানগর আওয়ামীলীগ সভাপতি এড. খোকন সাহা লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানান, আদালত চার্জ গঠন করায় বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আশাবাদী এর ফলে বোমা হামলায় নিহতের স্বজন এবং আহতরা ন্যায় বিচার পাবে।
এর আগে ২০০১ সালের ১৬ জুন ভয়াবহ বোমা হামলায় ২০ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার চার্জশিট ২০১৩ সালের ২ মে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) আদালতে জমা দেয়। গত ২০ এপ্রিল চার্জ গঠন করা হয়।
এ দুটি মামলায় বাদীসহ সাতজনকে সাক্ষী করা হয়েছে। তারা হলেন বাদী অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, চাষাঢ়া এলাকার তারিক আউয়াল, নিকসন কুমার সেন, কাজল ইসলাম, রাজীব দাস ও খবির আহম্মেদ।
মামলার বাদী নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা আরো জানান, বোমা হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে একটি ও ২০ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় অপর একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৩ সালের ২ মে ছয়জনকে অভিযুক্ত ও ৩১ জনকে অব্যাহতি প্রদান করে আদালতে দুটি মামলার চার্জশিট দিয়েছে সিআইডি। এর মধ্যে গতবছরের অক্টোবরে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক কেএম মহিউদ্দিন নারায়ণগঞ্জ জজ আদালতে মামলার বিচার কাজ শুরু করার আদেশ দেন। আদেশের আগে আদালতে চার্জশিটের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। মামলার বাদী চার্জশিটের ব্যাপারে নারাজি করলে আদালত সেটা গৃহীত করে।
মামলায় জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, জেলা বিএনপি নেতা আনিসুল ইসলাম সানি, মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন, নুরুল ইসলাম সরদার, সুরুজ্জামান, ইকবাল আহমেদ শ্যামল, অকিলউদ্দিন ভূইয়া, মমতাজ উদ্দিন মন্তু, মনিরুল ইসলাম রবি, ক্যাপ্টেন দুলাল, তুষার আহমেদ মিঠু, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান রোজেল, সহসভাপতি রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী, বদিউজ্জামান, জাহাঙ্গীর আলম, সামসুল ইসলাম মিঠুসহ ৩১ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ২০০১ সালের ১৬ জুন শহরের চাষাঢ়াস্থ আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলায় মারা যান ২০ জন।
ঘটনাস্থলে ১১ জন ও পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর মৃত্যু হয় ৯ জনের। এদের মধ্যে ১৯ জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেলেও পরিচয় মেলেনি ১ নারীর।
নিহত হয়েছিল শহর ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুল হাসান বাপ্পী, সহোদর সরকারি তোলারাম কলেজ ছাত্র-ছাত্রী সংসদের জিএস আকতার হোসেন ও সংগীতশিল্পী মোশাররফ হোসেন মশু, সংগীতশিল্পী নজরুল ইসলাম বাচ্চু, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম-সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ভাসানী, নারায়ণগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ বি এম নজরুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাইদুর রহমান সবুজ মোল্লা, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী পলি বেগম, ছাত্রলীগ কর্মী স্বপন দাস, কবি শওকত হোসেন মোক্তার, পান সিগারেট বিক্রেতা হালিমা বেগম, সিদ্ধিরগঞ্জ ওয়ার্ড মেম্বার রাজিয়া বেগম, যুবলীগ কর্মী নিধু রাম বিশ্বাস, আব্দুস সাত্তার, আবু হানিফ, এনায়েত উল্লাহ স্বপন, আব্দুল আলীম, শুক্কুর আলী, স্বপন রায় ও অজ্ঞাতপরিচয় এক নারী।
বোমা হামলার পরের দিন খোকন সাহা বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় দুটি মামলায় (একটি বিস্ফোরক অন্যটি হত্যা) জেলা বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক (বর্তমানে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা কমিটির সভাপতি) অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে প্রধান করে বিএনপি ও এর অঙ্গ দলের মোট ২৭ জনকে আসামি করা হয়। মামলার আসামিরা হলেন জেলা বিএনপি নেতা আনিসুল ইসলাম সানি, মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন, নুরুল ইসলাম সরদার, সুরুজ্জামান, ইকবাল আহমেদ শ্যামল, অকিলউদ্দিন ভূইয়া, মমতাজ উদ্দিন মন্তু, মনিরুল ইসলাম রবি, ক্যাপ্টেন দুলাল, তুষার আহমেদ মিঠু, কাউন্সিলার শওকত হাশেম শকু, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান রোজেল, সহ-সভাপতি রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী, বদিউজ্জামান আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর আলম, সামসুল ইসলাম মিঠু প্রমুখ।
ঘটনার দীর্ঘ ২২ মাস পর ২০০৩ সালের এপ্রিল মাসে মামলা দুটির ফাইনাল রিপোর্টে বলা হয়, ‘উল্লেখিত ২৭ জনের কেউই চাষাড়া আওয়ামী লীগ অফিসে ১৬ জুন ২০০১ সালের বোমা হামলায় জড়িত নয়। যদি ভবিষ্যতে অত্র মামলার তথ্য সম্বলিত ক্লু পাওয়া যায় তবে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার ব্যবস্থা করতে হবে।’ দীর্ঘ প্রায় ছয় বছর পর সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ২ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে মামলাটি নিষ্পত্তি করার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয়। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ঘটনায় নিহত চা দোকানি হালিমা বেগমের ছেলে আবুল কালাম বাদী হয়ে শামীম ওসমান, তার ভাই নাসিম ওসমান, সেলিম ওসমানসহ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও এর সহযোগী সংগঠনের ৫৮ নেতাকর্মীকে আসামি করে একটি মামলা করেন। পরবর্তীতে উচ্চ আদালত এ মামলাটি খারিজ করে দেয়।