চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বাসে বোমা হামলা এবং ক্যাম্পাসে ককটেল ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধারের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে, যাতে আসামি করা হয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীসহ অন্তত ৯৫ জনকে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ বুধবার গভীর রাতে হাটহাজারী থানায় মামলা দুটি করে দায়ের করে।
হাটহাজারী থানার ওসি মো. ইসমাইল জানান, পুলিশের পক্ষে এসআই মনজুর আহামেদ যে মামলাটি করেছেন তাতে ৭৫ শিবিরকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
এর মধ্যে গ্রেপ্তার ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে বাকি ৫০ জনকে দেখানো হয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি হিসাবে।
এসআই মনজুর বলেন, “মামলার আসামিরা সবাই শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।”
বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরের উপ-পরিচালক রবিউল আলম অজ্ঞাতপরিচয় ২০ জনের বিরুদ্ধে অপর মামলাটি দায়ের করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি হল খুলে দেয়ার দাবিতে ছাত্র ধর্মঘটের মধ্যে বুধবার সকালে হাটহাজারি সড়কের ছড়ারকুল এলাকায় শিক্ষকদের দুটি বাসে হাতবোমা ছোড়ে শিবিরকর্মীরা।
ঘটনার পরপরই হামলায় জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় ছাত্রদের বেশ কয়েকটি মেসে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় আরো ২০ শিবিরকর্মীকে।
ওই অভিযানে হাতবোমা, রামদা, কিরিচসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র উদ্ধার হয় বলে পুলিশ জানায়।
হাটহাজারী সার্কেলের এএসপি আ ফ ম নিজামউদ্দিন বলেন, “সকালে আটক পাঁচজনের মধ্যে দুজন হামলায় জড়িত থাকার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।”
বোমা হামলায় আহত ১৪ জনের মধ্যে নয়জনকে তাৎক্ষণিকভাবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এরা হলেন- প্রাণ রসায়ন বিভাগের প্রভাষক সোনাম আক্তার ও সুনন্দা বৈদ্য, ফলিত পদার্থ বিদ্যা বিভাগের প্রভাষক সাবরিনা আলম, সমাজতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক ফাতেমা-তুজ-জোহরা, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শিরিন আরা চৌধুরী, রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সৈয়দা হালিমা বেগম, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক রওশন আরা আফরোজ, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যপাক মো. আশরাফুজ্জামান ও অ্যাকাউন্টিং বিভাগের শিক্ষার্থী অমৃতা নাগ।
তাদের অনেকের শরীরেই বোমার স্প্লিন্টারের ক্ষত রয়েছে বলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহীদুল গণি জানান।
বোমা হামলার পর ঘটনাস্থলে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক এইচ এম কামরুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাধারণ শিক্ষর্থীদের নামে ছাত্রশিবিরই বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট ডেকেছে। তারাই বাসে বোমা হামলা চালিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই এতে জড়িত।”
গত ২৪ অগাস্ট ক্যাম্পাসে ইসলামী ছাত্র শিবির ও ছাত্রলীগকর্মীদের মধ্যে গোলাগুলির পর ‘সোহরাওয়ার্দী’ হলে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় বেশ কিছু পেট্রোল বোমা ও পাথর উদ্ধার করা হয়।
পরদিন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিবিরকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এ হলটি বন্ধ করে দেয়।
এছাড়া গত ১২ জানুয়ারি শিবির-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় সিলগালা করে দেয়া হয় ‘শাহ আমানত হল’। এ হলটিও শিবির কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
এরপর হল খুলে দেয়ার দাবিতে ‘হলের আবাসিক শিক্ষার্থী’ নামে শিবিরকর্মীরা বিভিন্ন গণম্যাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে ৩১ অগাস্ট থেকে থেকে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয়।
এই ধর্মঘটের প্রথম দিন চৌধুরীহাট স্টেশনে শাটল ট্রেনে হাতবোমা ছুড়ে ধর্মঘটকারীরা। পরদিন একই এলাকায় শিক্ষকবাস ভাংচুর করা হয়।
এছাড়া গত ৪ সেপ্টেম্বর নগরীর পাহাড়তলী ইস্পাহানি রেল ক্রসিং এলাকাতেও একটি বাস ভাংচুর করে তারা।