ঢাকা, এপ্রিল ২৪, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১৮:৩৮:৫৯

কোমর ব্যথা হলেই কিডনির সমস্যা নয়

| ২৩ শ্রাবণ ১৪২৪ | Monday, August 7, 2017

কোমর ব্যথা হলে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ভাবেন, কিডনির সমস্যা হচ্ছে হয়তো। হ্যাঁ, কিডনিতে পাথর বা কিডনির সমস্যা হলেও কোমর ব্যথা হতে পারে। কোমর ব্যথার অনেক কারণের মধ্যে এটিও একটি। তবে এর সংখ্যা খুবই কম। এ ছাড়া বিভিন্ন কারণে কোমর ব্যথা হতে পারে। যেমন :

১. মেকানিক্যাল ব্যাকপেইন

এই মেকানিক্যাল ব্যাকপেইনে ৮০ শতাংশ মানুষ ভুগে থাকেন। যাঁরা একাধারে দীর্ঘক্ষণ বসে কিংবা দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করেন, তাঁদের এ ধরনের সমস্যা বেশি দেখা দেয়। যেমন : মাসল-ম্পাজম বা মাংসপেশির সংকোচন, মাংসপেশির দুর্বলতা ইত্যাদি।

২. লাম্বার স্পনডাইলোসিস

এটি মেরুদণ্ডের কশেরুকাগুলোর ক্ষয়জনিত রোগ। এখানে মেরুদণ্ডের কশেরুকাগুলো ক্ষয় হয়ে দুটি কশেরুকার মধ্যবর্তী স্থানের ফাঁকা জায়গা কমে যায়। পাশাপাশি কশেরুকাগুলোর সঙ্গে ছোট ছোট নতুন হাড়ের সৃষ্টি হয়। একে অস্টিওফাইট বলে। এটি স্পাইনাল নার্ভগুলোর ওপর চাপ দেয়। এতে কোমরে ব্যথা অনুভূত হয়।

৩. লাম্বার স্পনডাইলোলিসথেসিস

আমাদের মেরুদণ্ডের কশেরুকাগুলো একটি নির্দিষ্ট অ্যালাইনমেন্ট বা অবস্থানে থাকে। যখন কোনো কারণে এই কশেরুকাগুলোর এক বা একাধিক কশেরুকা তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে সরে যায়, তখন এই সমস্যাকে লাম্বার স্পনডাইলোলিসথেসিস বলা হয়। এতে কোমরে ব্যথা অনুভূত হয়।

৪. এনকাইলোজিং স্পনডাইলাইটিস

এটি একটি মেরুদণ্ডের বাত রোগ। এতে মেরুদণ্ডটির স্বাভাবিক বক্রতা নষ্ট হয় এবং এটি সোজা হয়ে যায়। পাশাপাশি একটি কশেরুকা অন্যটির সঙ্গে ফিউজড বা জমাট বেঁধে যায়। এতে রোগীর মেরুদণ্ডের মুভমেন্ট বা নড়াচড়া কমে যায়। আক্রান্ত ব্যক্তির ঘাড় ও কোমরের রেনজ অব মোশন বা মুভমেন্ট কমে যায়।

৫. পিএলআইডি বা ডিস্ক-প্রলেপস

আমাদের মেরুদণ্ডের গঠন অনুযায়ী প্রতিটি কশেরুকার মধ্যবর্তী স্থানে পেশির মতো সেমি সলিড এক ধরনের পদার্থ থাকে। একে মেডিকেল পরিভাষায় ডিস্ক বলে। এটির মাঝখান থেকে স্পাইনাল নার্ভগুলো বের হয়ে রুট অনুযায়ী হাত ও পায়ের দিকে যায়। যখন এই ডিস্ক তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে সরে যায়, তখন এটিকে ডিস্ক প্রলেপস বলে। এই ডিস্ক সরে গিয়ে মেরুদণ্ডের ওপর চাপ পড়ে। তখন ব্যথা অনুভূত হয়।

৬. অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ভঙ্গুরতাজনিত কোমর ব্যথা

এটি হাড়ের ক্ষয়জনিত রোগ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেমন আমাদের চুল পেকে যায়, তেমনি হাড়ের ভেতরের উপাদানগুলো কমে যায়। এতে বোন মিনারেল ডেনসিটি কমে গিয়ে হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। কোমরের মেরুদণ্ডের হাড়গুলো যখন অস্টিওপরোসিসে আক্রান্ত হয়, তখন কোমর ব্যথা অনুভূত হয়।

৭. স্পাইনাল টিউমার বা ক্যানসার

আমাদের মেরুদণ্ডের লাম্বার স্পাইনে বা কোমরের অংশে যদি টিউমার, টিউবারকোলোসিস বা টিবি অথবা ক্যানসার হয়, সে ক্ষেত্রেও কোমর ব্যথা হতে পারে।

কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, বেশিরভাগ কোমর ব্যথার কারণগুলোর উপসর্গ প্রায়ই একই। তাই কোমর ব্যথা হলে অবহেলা না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

লেখক : ডা. এম. ইয়াছিন আলী-বাত, ব্যথা, প্যারালাইসিস রোগে ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ; চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট।