ঢাকা, এপ্রিল ১৯, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১১:৪৮:২১

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় আসার নিশ্চয়তা না পেয়ে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে : প্রধানমন্ত্রী মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষের সাংস্কৃতিক সম্পৃক্ততার আহ্বান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর সংসদে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে স্বতন্ত্র সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প বাস্তবায়নে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে পিপিপি বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আগমন স্বচ্ছ নির্বাচনে সহায়ক : তথ্যমন্ত্রী

কেবল কর্মকর্তা নয়, দেশপ্রেমিক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করুন ডিসি সম্মেলনে : প্রধানমন্ত্রী

| ১৫ শ্রাবণ ১৪২২ | Thursday, July 30, 2015

 

জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কেবল একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নয়, একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবেও আমাদের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত এবং সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের অগ্রযাত্রায় আপনাদের শরিক হওয়ার আহ্বান জানাই। আপনারা এ কর্মকাণ্ডে নিজেরা আত্মনিয়োগ করবেন এবং আপনাদের সহকর্মীদেরও উৎসাহিত করবেন।’

গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী তাঁর কার্যালয়ে জেলা প্রশাসকদের বার্ষিক সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, জেলা প্রশাসকদের কেবল রুটিন কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে এর বাইরেও সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণের কল্যাণে নতুন নতুন উপায় ও কৌশল খুঁজে বের করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেলা প্রশাসকদের মাঠপর্যায়ে সরকারের নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং জনগণ ও সরকারের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে ভূমিকা পালনে পুরনো দিনের আমলাতান্ত্রিক ধ্যানধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

২০১৪ সালে অব্যাহত দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এটা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় সম্মেলন। তিন দিনের এ সম্মেলনে জেলা প্রশাসকরা তাঁদের দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন বাধা ও সমস্যা নিয়ে সরকারের মন্ত্রী ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ পাবেন। এতে তাঁরা এসব সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা লাভ করবেন।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সচিব, বিভাগীয় কমিশনার ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদসচিব এম মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা। এ ছাড়া চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এম আবদুল্লাহ, সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান, হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম ও লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বক্তব্য দেন।

সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নিজ এলাকায় ডিজিটাল সার্ভিস উন্নয়নে অবদানের জন্য রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার দেলওয়ার বখত, কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন, পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক এম সালাউদ্দিন ও নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান মিয়াকে ‘ডিজিটাল সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করেন।

প্রধানমন্ত্রী সব ধরনের ভয়ভীতি ও প্রলোভনের ঊর্ধ্বে আইনের আওতায় দায়িত্ব পালন করতে জেলা প্রশাসকদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘রাষ্ট্র তথা জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণই হবে আপনাদের মূল লক্ষ্য। সেবার মনোভাব নিয়ে সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকলে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হবে।’

এ ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা জেলা প্রশাসকদের কিছু নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের কাজের মাঝেও আপনাদের এসব বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে।’ তিনি বলেন, সরকারি সেবা পেতে মানুষ যাতে কোনোভাবেই হয়রানি ও বঞ্চনার শিকার না হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন, মানবপাচার, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার, যৌতুক, ইভ টিজিং ও বাল্যবিবাহ বন্ধে জেলা প্রশাসকদের কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া এবং নারীশিক্ষার হার বৃদ্ধি, ঝরে পড়ার হার কমানো ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্রতিটি জেলার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও বিশেষ ফসল রয়েছে। জেলা প্রশাসকদের এসব কৃষিপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি এর প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতের জন্য প্রয়োজনীয় পল্লী অবকাঠামো গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সার, বীজ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেলা প্রশাসকদের তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অবশ্যই জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করতে হবে এবং সরকারের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে সার্বিক সহায়তা দিতে হবে। তিনি সরকারি ভূমি রক্ষায় সজাগ দৃষ্টি রাখা, ভূমি প্রশাসন এবং ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বাজারজাত প্রতিরোধ, পরিবেশের সুরক্ষা ও জলাশয় সংরক্ষণে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং এ-সংক্রান্ত আইন যথাযথভাবে প্রয়োগের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণ মানুষের জন্য সহজে সুবিচারের জট কমাতে গ্রাম আদালত কার্যকর করতে হবে। তিনি নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ দৃঢ়ভাবে অনুসরণ ও বাস্তবায়ন এবং জনগণকে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের ব্যাপারে সচেতন করার পদক্ষেপ নেওয়ারও নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ভোক্তা অধিকারকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে এবং বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির যেকোনো অপচেষ্টা কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকদের আঞ্চলিক পরিষদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, পার্বত্য জেলাসমূহের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, বনাঞ্চল, নদী-জলাশয়, প্রাণিসম্পদ ও গিরিশৃঙ্গগুলোর সৌন্দর্য সংরক্ষণ করতে হবে।

শেখ হাসিনা চলতি বছরের শুরুতে ও এর আগে কিছু রাজনৈতিক দলের ধ্বংসযজ্ঞ, নৈরাজ্য ও নিরপরাধ মানুষের প্রতি নৃশংসতা দমনে গৃহীত পদক্ষেপের জন্য জেলা প্রশাসকদের ধন্যবাদ জানান। নিরপরাধ মানুষকে পুড়িয়ে মারার এ নির্মমতার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকদের সক্রিয়তার কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে- এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তির ব্যাপারে আপনাদের ভবিষ্যতে সজাগ থাকতে হবে।’

আরও পড়ুন...