ঢাকা, এপ্রিল ২৫, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১৬:০৮:০২

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজে’র পুনর্বাসন না করে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা হবে না: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি হিসেবে ফের নিয়োগ পেলেন বিপ্লব বড়ুয়া সংসদ অধিবেশন উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ আপিলে দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৫১ জন নির্বাচনে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি সেনাবাহিনী চায় ইসি : পিএসও আদালত আবমাননায় বিচারক সোহেল রানার সাজার বিরুদ্ধে আপিলের রায় ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর ২১টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৪ জন গ্রেফতার : ডিএমপি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কিনা, জানালেন ইসি

কাশ্মীরে শিশু আসিফাকে ধর্ষণ-হত্যা, কবর দিতেও বাধা

| ১ বৈশাখ ১৪২৫ | Saturday, April 14, 2018

 

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের কাথুয়া এলাকায় একটা বড় তৃণভূমি আছে। সাধারণত শীতের সময়টায় যাযাবর বাকারওয়ালা সম্প্রদায়ের লোকজন সেখানেই নিজেদের পশুদের চড়াতে নিয়ে যায়। এলাকাটিতে যাযাবর সম্প্রদায়ের মানুষ খুব বেশি নয়, হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। সেখানেই একটি যাযাবর পরিবারে জন্ম আসিফা বানুর।

গত জানুয়ারি মাসে প্রতিদিনের মতোই এক সকালে আট বছর বয়সী আসিফা বানু নিজের বাড়ি থেকে মেষগুলো নিয়ে উপত্যকার মাঠে বেরিয়ে যায়। সেদিন তাঁর পরনে বেগুনি রঙের একটা জামা। একসময় একটা লোক আসিফাকে বনের দিকে যেতে ইশারা করে। আসিফাও কিছু না বুঝে সেই লোকটার পেছন পেছন যায়।

পুলিশের বর্ণনানুযায়ী, বনের ভেতরে যাওয়ার পর পরই আসিফাকে ঘাড়ে ধরে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘুমের ওষুধ খেতে বাধ্য করা হয় তাকে। এরপর ওই লোকটি বন্ধুদের সহায়তায় আসিফাকে বনের একটি মন্দিরে নিয়ে গিয়ে বন্দি করে রাখে।

পরের তিনটি দিন অন্তত তিনজন মিলে আসিফার ওপর গণধর্ষণ চালায়। শেষটায় শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় মেয়েটিকে। হত্যার আগেও নাকি শেষবারের মতো তাকে ধর্ষণ করতে চেয়েছিল এক ধর্ষক। বেশ কয়েক দিন পর বনের মধ্যে আসিফার থেঁতলে যাওয়া মৃতদেহ পাওয়া যায়। সেই বেগুনি রঙের জামাটিই পরা ছিল তখন।

এই ঘটনা ঘটে এই বছরের ১০ জানুয়ারি। পুলিশের ধারণা, মন্দিরের সেবায়েত সঞ্জিরামের এর সঙ্গে যোগসূত্র থাকতে পারে। চক্রটি আসিফাকে ধর্ষণ ও হত্যার জন্য একটি ‘সফট টার্গেট’ হিসেবে বেছে নিয়েছিল, যাতে ভয়ানকভাবে যাযাবর গোষ্ঠীর লোকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানো যায়।

আসিফার চাচা মুহাম্মদ জেন আসিফাদের বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে বসবাস করেন। জেন বলেন, ‘এটা একটা হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা, যেখানে মাত্র চারটি মুসলিম পরিবার বসবাস করে। দ্বন্দ্বটা মূলত গত বছর শুরু হয়, যখন মুসলিম পরিবারগুলোর কাছে বিক্রি করা এক একর জমি হিন্দুরা ফেরত চায়। এই পরিবারগুলোকে তাড়াতেই এই অত্যাচার শুরু হয়।’

এমনকি আসিফার মরদেহ ওই এলাকায় কবর দিতেও দেয়নি হিন্দুরা। মুহাম্মদ জেন বলেন, ‘যখন কবর দেওয়ার জন্য ওর লাশ এলাকায় নিয়ে আসা হলো, গ্রামের লোকজন আমাদের ওপর আক্রমণ করে। তারা জানায়, জমি ফেরত না পেয়ে তারা আসিফার লাশ কবর দিতে দেবে না।’

আসিফার এই নির্মম মৃত্যুতে ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সাধারণ মানুষ আন্দোলন করলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি গোষ্ঠী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে এ ঘটনার আসামিদের রক্ষার জন্য। এ পর্যন্ত এ ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাদের প্রত্যেকেই হিন্দু। আর তাদের বাঁচাতেই এই গোষ্ঠীর আন্দোলন।

তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কেউ কেউ মুসলিম হওয়ায় এ তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু নাগরিক।

এই সপ্তাহে আসিফার মামলাটির কাগজপত্র জমা দিতে আদালতে গিয়েছিলেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এ সময় কিছু হিন্দু আইনজীবী আদালতে ঢুকতে পুলিশ সদস্যদের সশরীরে বাধা দেন। এরপর সন্ধ্যায় গিয়ে কাগজপত্র জমা দিতে হয় তাঁদের।

ভারতে এখন এ নিয়ে আন্দোলন আর পাল্টা আন্দোলন চলছেই। গত বুধবার বেশ কিছু হিন্দু নারী এ মামলার আসামিদের পক্ষে হাইওয়ে অবরোধ করে অনশন ধর্মঘট করে। এদের একজন বিমলা দেবী বলেন, ‘তারা আমাদের ধর্মবিরোধী। যদি গ্রেপ্তার হওয়া হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে ছেড়ে দেওয়া না হয়, আমরা আমাদের জ্বালিয়ে দেবো।’

আসিফা বানুর বাবা মুহাম্মদ ইউসুফ পুজওয়ালা বলেন, তাঁর মেয়েকে একটা কারণেই খুন করা হয়েছে। আর তা হলো তাদের ওই এলাকা থেকে সরানোর জন্য।

মুহাম্মদ ইউসুফ পুজওয়ালা বলেন, ‘কিন্তু আমাদের জীবন আর জমি এখানেই। এটা আমাদের ঘর। আসিফার ভাই স্কুলে গেলেও আসিফা আর কখনো স্কুলে যাবে না। মাঠে খেলা করাই ওর প্রিয় কাজ ছিল।‘ শোকে তখন এই বাবার কণ্ঠ ক্লান্ত শোনাচ্ছিল।