ঢাকা, এপ্রিল ২৫, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১৩:১৬:৪৮

কারপাল টানেল সিনড্রোম : কারণ ও করণীয়

| ৩০ বৈশাখ ১৪২৫ | Sunday, May 13, 2018

হাতের কব্জি থেকে হাতের তালু ও আঙুলগুলো অবশ হয়ে আসা, ঝিনঝিন করা, আবার কখনো ব্যথা হওয়া বা ফুলে যাওয়া—এই সমস্যাগুলো সাধারণত যে রোগের কারণে দেখা যায়, তার মধ্যে অন্যতম হলো কারপাল টানেল সিনড্রোম। নারীদের মধ্যে এই রোগ হওয়ার প্রবণতা বেশি। বিশেষ করে গর্ভকালীন ও মেনোপজ-পরবর্তী সময়ে এ সমস্যা বেশি দেখা দেয়।

কেন হয়?

যে হাড়গুলো একত্র হয়ে আমাদের কব্জি গঠন করে, সেই হাড়গুলোকে মেডিকেলের পরিভাষায় কারপাল বোনস বলা হয়। কব্জিতে সেই হাড়গুলোর মধ্যে একটি ছোট্ট টানেল বা গহ্বর রয়েছে, যার নাম কারপাল টানেল। এই টানেলের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন শিরা ও স্নায়ু হাতে প্রবেশ করে। এর অন্যতম হলো মিডিয়ান নার্ভ। কোনো কারণে এ টানেলের মধ্যকার নাভর্টি চাপ খেলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া ফুলে যাওয়া, পানি জমা ইত্যাদি কারণেও এমন হতে পারে। স্থূলতা, থাইরয়েডের সমস্যা, ডায়াবেটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও এসএলই (সিস্টেমিক লুপাস ইরাইথেমাস) ইত্যাদি রোগ এর ঝুঁকি বাড়ায়। কখনো একই ধরনের হাতের কাজ বারবার করার কারণে টানেলের ওপর চাপ পড়ে। যেমন—লেখালেখি করা, সেলাই করা, টেনিস খেলা, গলফ খেলা বা বেহালা বাজানো ইত্যাদি।

লক্ষণ

আঙুল ঝিনঝিন বা অবশ ভাব, জ্বলে যাওয়া, খাবার খেতে, হাত মুষ্টিবদ্ধ করতে বা কোনো জিনিস ধরতে সমস্যা। লক্ষণগুলো রাতে বেশি দেখা যায়। সবচেয়ে বেশি হয় হাতের বুড়ো আঙুল, তর্জনী ও মধ্যমাতে। ঝিনঝিন অনুভূতি ও ব্যথার কারণে রাতে ঘুম ভেঙে যায়, যা হাতে ঝাঁকুনি দিলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। এসব লক্ষণ ওপরের দিকে ছড়িয়ে বাহুতে চলে যেতে পারে। চিকিৎসা না করালে আঙ্গুলের মাংসপেশি শুকিয়ে যেতে পারে।

রোগ নির্ণয়

রোগীর উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসক ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশনের পাশাপাশি আক্রান্ত হাতের এনসিভি (নার্ভ কনডাকশন ভেলোসিটি) টেস্টের মাধ্যমে রোগটি সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায়।

চিকিৎসা

কারপাল টানেল সিনড্রোমের চিকিৎসায় স্নায়ুর ব্যথা কমানোর ওষুধ ও পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা এবং হাতের বিশ্রামের জন্য স্ল্পিন্ট ব্যবহার করতে হয়। এই রোগে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা খুবই উপকারী। ওষুধ ও ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিরাময় না হলে কখনো কখনো সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।

পরামর্শ

যাঁরা টেবিলে বসে দীর্ঘক্ষণ কাজ করেন, লেখেন কিংবা কম্পিউটারে টাইপ করেন, তাঁরা প্রতি ৩০ মিনিট পরপর সামান্য বিরতি নিতে পারেন। হাতের বাহু যেন কাজের সময় বিশ্রামে থাকে। টেবিল ও হাতের ব্যবধান ঠিক করে নিন, যাতে হাত টেবিলের সমান্তরালে থাকে। মাঝেমধ্যে টাইপ করা বা লেখার বিরতিতে বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের নির্দেশিত হাতের ব্যায়ামগুলো করুন।

লেখক

ডা. এম ইয়াছিন আলী

বাত, ব্যথা, প্যারালাইসিস রোগে ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ

ডা. এম ইয়াছিন আলী,চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট,

ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমণ্ডি, ঢাকা।