ঢাকা, এপ্রিল ২০, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ২১:৫৮:৪২

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় আসার নিশ্চয়তা না পেয়ে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে : প্রধানমন্ত্রী মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষের সাংস্কৃতিক সম্পৃক্ততার আহ্বান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর সংসদে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে স্বতন্ত্র সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প বাস্তবায়নে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে পিপিপি বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আগমন স্বচ্ছ নির্বাচনে সহায়ক : তথ্যমন্ত্রী

ঐতিহাসিক ৭মার্চ আজ

| ২৪ ফাল্গুন ১৪২২ | Monday, March 7, 2016

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আজ। দীর্ঘ মুক্তিসংগ্রামের ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধের সুস্পষ্ট ডাক দেওয়ার এক অবিনাশী দিন। এই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশবাসীকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

বাঙালি জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা ১৯৭১ সালের এই দিনে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জাতির অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক উত্তাল জনসমুদ্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দিয়ে গিয়ে বজ্রকন্ঠে বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’।

এই প্রজন্মের কেউ সে উত্তাপ, সে উত্তেজনা আর দিক নির্দেশনা ধারণ-ধারণ অনুধাবন করতে পারবে না সেভাবে কিন্তু তার কিছুটা উত্তাপ, উপস্থাপনা বজ্রকন্ঠ ধারিত ভাষণ অনুধাবন করতে পারে নির্মলেন্দু গুণ’র কবিতার মাধ্যমে। যেখানে কবি বর্ণনা করেছিলেন রেসকোর্স বর্তমানের সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের সে পরিবেশ।

কবিতায় কবি লিখেন-“একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য কি দারুণ অপেক্ষা আর উত্তেজনা নিয়ে লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে ভোর থেকে, জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে: ‘কখন আসবে কবি’?….শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে রবীন্দ্রনাথের মত দৃপ্ত পায়ে হেঁটে অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন…. কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠ বাণী? গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি: ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।”

এর আগে ৩ মার্চ পল্টনের জনসমাবেশে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ৬ মার্চের মধ্যে যদি সরকার তার অবস্থান পরিবর্তন না করে তাহলে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

৩ মার্চের পর তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের চরম দমন-পীড়নে বিক্ষুব্ধ মানুষ নতুন কর্মসূচির অপেক্ষায় ছিল। ভোর হতেই চারদিক থেকে মানুষের ঢল নামে রেসকোর্স ময়দানে। ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা তোমার আমার ঠিকানা’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’ স্লোগানে মুখর হয়ে উঠেছিল রেসকোর্স ময়দান।

৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে স্বাধীনতার ঘোষণা যাতে না দেন, তার জন্য মার্কিন সরকার তৎপরতা শুরু করে। ৭ মার্চ সকালে পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ধানমণ্ডির বত্রিশ নম্বরে সাক্ষাত করেন। স্বল্প সময়ের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পরিষ্কার ভাষায় ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্তের কথা বঙ্গবন্ধুকে জানান। তিনি বলেন- ‘পূর্ববাংলায় স্বঘোষিত স্বাধীনতা হলে যুক্তরাষ্ট্র তা সমর্থন করবে না।’

বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণে বলেছিলেন, ‘…এরপর যদি একটি গুলি চলে, এরপর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়- তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। …আমি যদি তোমাদের হুকুম দেবার নাও পারি তোমরা সব বন্ধ করে দেবে। …রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব। তবু এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ওইদিন একই মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের আগে বক্তব্য দিয়েছিলেন আসম আবদুর রব, নুরে আলম সিদ্দিকী, শাহজাহান সিরাজ, আবদুল কুদ্দুস মাখন, আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ।

স্বাধীনতার জন্য সারাদেশ থেকে ছুটে আসা পিপাসার্ত মানুষের তৃষ্ণা মিটে বঙ্গবন্ধুর মাত্র ১৯ মিনিটের অমর কবিতায়, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণে। এই একটি ভাষণেই নিরস্ত্র বাঙালীকে সশস্ত্র জাতিতে পরিণত করেন বঙ্গবন্ধু। বিশ্বের ইতিহাসে কোন রাষ্ট্রনায়ক বা নেতা স্বাধীনতার ঘোষণা পূর্ব এই ধরনের ভাষণ দেয়ার নজির নেই। বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণার দিন থেকেই মূলত সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার অঙ্কুরোদগম ঘটতে থাকে বাংলাদেশে।

২৬ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে তারা। আওয়ামীলীগ নেতা আবদুল হান্নান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন, এরপর আরও অনেকেই বঙ্গবন্ধুর পক্ষে এ ঘোষণা পাঠ করার পর ২৭ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমানও বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।

মুক্তি সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ঝাঁপিয়ে পড়া মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।