ঢাকা, এপ্রিল ২৩, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১৯:৩১:৫৫

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

পূর্ব লেবাননে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল জিম্মি চুক্তিতে হামাসকে রাজি করাতে মিসর ও কাতারের দ্বারস্থ বাইডেন দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক মহড়া চীনের গাজা যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে রমজানে মুসলমানদের আল আকসায় নামাজ পড়ার অনুমতি দিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ গাজায় তুমুল যুদ্ধ ॥ চলছে যুদ্ধবিরতির বৈঠক জর্ডানে মার্কিন সৈন্য হত্যা ॥ দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার অঙ্গীকার যুক্তরাষ্ট্রের গাজা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে জাতিসংঘ দূতদের সাক্ষাত জি৭ নেতাদের ভিডিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী না হলে বাইডেন ও অনিশ্চিত

এরদোয়ানের ‘অস্তিত্বে’ আঘাত, আঙ্কারা-ইস্তাম্বুল হাতছাড়া

| ১৮ চৈত্র ১৪২৫ | Monday, April 1, 2019

 

দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে কঠিনভাবে রাশ টেনে রেখে তুরস্কের রাজনীতিতে নিজের প্রভাবকে প্রায় তুঙ্গে নিয়ে যাওয়া প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন।

গতকাল রোববারের এই ভোটকে কেন্দ্র করে দুই মাস ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রচার চালিয়ে আসা প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান একে ‘অস্তিত্বের প্রশ্ন’ হিসেবে জনগণের কাছে অভিহিত করে আসছিলেন।

কিন্তু প্রতিদিনের মিছিল-সমাবেশ এবং গণমাধ্যমের লাগাতার সমর্থন সত্ত্বেও দেশটিতে অর্থনৈতিক মন্দা ভাবের কারণে রাজধানী আঙ্কারায় প্রথমবারের মতো নিয়ন্ত্রণ হারাতে হলো এরদোয়ানের দল এ কে পার্টিকে। দেশটির সবচেয়ে বড় শহর ইস্তাম্বুলেও প্রত্যাশিত ফল ধরে রাখতে পারেননি এরদোয়ান।

যদিও নির্বাচনের পর এরদোয়ান তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘যদি কোথাও কোনো খামতি থাকে, সেটা আমাদের সংশোধন করতে হবে। তবে যদিও জনগণ মেয়র পদের জন্য এ কে পার্টিকে বেছে নেয়নি। কিন্তু জেলাগুলোকে তাঁরা এ কে পার্টির আওতাতেই রেখেছেন।’

২০২৩ সালের জাতীয় নির্বাচন মাথায় রেখে এরদোয়ান তাঁর নেতৃত্বে তুরস্কের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ওপর নজর দেওয়ার ব্যাপারে সমর্থকদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সোমবার মার্কিন বার্তা সংস্থা থমসন রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৬ বছর আগে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তুরস্কের রাজনীতি এরদোয়ানের নিয়ন্ত্রণে। কঠিন হাতে দেশ শাসন করা এরদোয়ানের বিরুদ্ধে ‘সেক্যুলার’ বিরোধী দলের সমালোচনা প্রচুর। বিরোধীরা তাঁর বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের অভিযোগও এনেছেন। দেশটিতে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের কারণে হাজার হাজার মানুষকে কারাগারে রাখা হয়েছে। চাকরি থেকে বিতাড়িত হয়েছেন হাজার হাজার পেশাজীবী।

তুরস্কের গণমাধ্যম জানিয়েছে, বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) প্রার্থী মনসুর ইয়ামাস সুস্পষ্টভাবেই আঙ্কারায় নিজের বিজয় নিশ্চিত করেছেন। যদিও ইস্তাম্বুলে দুই দলই জয়ের দাবি করছে। এর ফল এখন পর্যন্ত বিতর্কিত।

বিরোধীদলীয় নেতা কামাল কিলিচদারোগলু বলেন, ‘জনগণ গণতন্ত্রের পক্ষে ভোট দিয়েছে, তারা গণতন্ত্রকে বেছে নিয়েছে।’ এরদোয়ানের এ কে পার্টির বদলে অসাম্প্রদায়িক দল সিএইচপি আঙ্কারা ও ইস্তাম্বুলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং তৃতীয় বৃহৎ শহর ইজমিরে শক্ত অবস্থানে আছে বলে জানান বিরোধীদলীয় নেতা।

এদিকে রাজধানী আঙ্কারার নিয়ন্ত্রণ হারানো এরদোয়ানের জন্য বড়সড় এক আঘাত। নব্বইয়ের দশকে এরদোয়ান আঙ্কারার মেয়র ছিলেন। বলা হয়ে থাকে, এখান থেকেই তাঁর রাজনীতিতে উত্থান। এখানে পরাজয় ধীরে ধীরে এরদোয়ানের জনসমর্থন হারানোর ইশারা হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আন্দালু জানিয়েছে, এরদোয়ানের দল এ কে পার্টি রাজধানীর বেশ কিছু জেলায় ভোটের ক্ষেত্রে আদালতে আপিল জানাবে।

এ কে পার্টি জানিয়েছে, ইস্তাম্বুলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম সিএইচপির প্রার্থী একরাম ইমামোগলুকে চার হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন। তাঁদের প্রত্যেকেই ৪০ লাখের বেশি ভোট পেয়েছেন।

এদিকে ইমামোগলু দাবি করেছেন, দুই হাজার ভোট গণনা বাকি থাকা অবস্থায় তিনি ২৮ হাজার ভোটে এগিয়ে আছেন।

২০১৬ সালে সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টার সময় সামরিক উড়োজাহাজ থেকে পার্লামেন্ট ভবনে বোমা হামলা চালানো হয়। সে সময় ২৫০ জনের বেশি নিহত হন। এরপর সারা দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন এরদোয়ান।  জরুরি অবস্থা জারির পর থেকে এক লাখ সাত হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সরকারি চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি হিসাবে ৫০ হাজার মানুষকে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে।

চাকরিচ্যুত ও কারাবন্দি অনেকেই দেশটির নির্বাসিত ইসলামিক নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনের সমর্থক। গুলেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। তিনি এরদোয়ানের একসময়ের মিত্র। তুরস্কের সরকারের অভিযোগ, গুলেন সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছেন। তবে তিনি তা অস্বীকার করেছেন।

গত বছরের জুনে ফের প্রেসিডেন্ট পদে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন এরদোয়ান। সংসদেও এ কে পার্টি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। ক্ষমতায় গিয়ে তিনি দুই বছর ধরে জারি থাকা জরুরি অবস্থার সমাপ্তি টানেন।