ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মো. নাজমুল কবিরকে গ্রেপ্তার করেছে দুদক। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কার্যালয়, যশোর, ৩ জানুয়ারি। ছবি: এহসান-উদ-দৌলামাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাজমুল কবীরকে আজ বুধবার বিকেলে ঘুষের দুই লাখ টাকাসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘দুদকের একটি দল যশোর থেকে ফাঁদ পেতে ঘুষের দুই লাখ টাকাসহ নাজমুলকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হিসেবে কর্মরত।’
দুদক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, যশোর শহরের শেখ মহব্বত আলী নামের এক ব্যক্তি দেশি মদের লাইসেন্স (অনুমোদন) নবায়ন করার জন্য নাজমুল কবীরের কাছে দুই লাখ টাকা ঘুষ দেন। ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি হাতেনাতে ধরতে আজ বুধবার দুপুরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ে ফাঁদ পেতেছিল দুদক। মহব্বত আলীর ঘুষ দেওয়ার সময় দুদকের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক নাসিম আনোয়ারের নেতৃত্বে একটি দল সেখানে অভিযান চালান। অভিযানে নাজমুল কবীরের কাছ থেকে দুই লাখ (এক হাজার টাকা নোট দুই বান্ডিল) টাকা উদ্ধার করেন দুদকের কর্মকর্তারা। নাজমুল কবীরকে আটক করে দুদক যশোর কার্যালয়ে আনা হয়।
নাজমুল কবিরের কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয় ঘুষের দুই লাখ টাকা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কার্যালয়, যশোর, ৩ জানুয়ারি। ছবি: এহসান-উদ-দৌলাদুদকের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক নাসিম আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যশোরের ডিডি নাজমুল কবীর তিন লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। ওই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান মহব্বত আলী। অনেক দেনদরবারের পর দুই লাখ টাকায় রাজি হন নাজমুল কবীর। বুধবার ওই ঘুষের টাকা দেওয়ার দিন ছিল। মহব্বত আলী দুদকের হটলাইন নম্বরে (১০৬) এ বিষয়ে অভিযোগ করেন। পরে কমিশন থেকে নয় সদস্যের একটি দল গঠন করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই নির্দেশ পেয়ে মঙ্গলবার যশোরে চলে আসেন তাঁরা। এরপর ঘুষের দুই লাখ টাকার ইনভেনটরি (টাকার নম্বরসহ শনাক্তকরণের বিভিন্ন চিহ্ন) করা হয়। বুধবার দুপুরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের পাশে অবস্থান নেন তাঁরা। এরপর মহব্বত আলী ওই ঘুষের টাকা দিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে যান। ঘুষ দেওয়ার সংকেত পাওয়ার পর ওই কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে দুই লাখ টাকাসহ ডিডি নাজমুল কবীরকে আটক করা হয়।
দুদকের যশোর কার্যালয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, নাজমুল কবীরকে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়েছে। তাঁর সঙ্গে সাংবাদিকদের কথা বলার সুযোগ রাখা হয়নি।
অভিযোগকারী শেখ মহব্বত আলী বলেন, ‘আমার নামে দেশি মদের একটি লাইসেন্স রয়েছে। ওই লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য ছয় মাস আগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালকের কাছে আবেদন করি। উপপরিচালক নাজমুল কবীর লাইসেন্স নবায়ন করতে গড়িমসি করেন। অন্যদের লাইসেন্স দিলেও আমারটা আটকে রাখেন। পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। দুই লাখ টাকা দিতে রাজি হই। দুদকের হটলাইনে প্রথমে মৌখিকভাবে ও পরে লিখিতভাবে এ বিষয়ে অভিযোগ করি। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেছি।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ে দেখা যায়, সেখানে আটজন কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত। যশোর কার্যালয়ে মোট কর্মীসংখ্যা ১৫ জন। ঘটনার বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। সেখানকার পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘একটি মামলার কাজে চারজন ঝিকরগাছায় ছিলাম। এ বিষয়ে আমরা কিছুই দেখিনি।’
উপপরিদর্শক সৈয়দ নূর মোহম্মদ বলেন, ‘ঘটনার সময় ডিডি (নাজমুল কবীর) স্যার ও অফিস সহকারী মনিরুজ্জামান ছাড়া অফিসে কেউ ছিলেন না।’
ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে।