ঢাকা, মার্চ ২৯, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, স্থানীয় সময়: ০৩:১৩:০৫

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট শিশুদের নতুন করে বাঁচার পথ খুলে দেয় : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির পণ্যমূল্য সহনীয় রাখতে সরকারের পাশাপাশি জনগণেরও নজরদারি চাই : সংসদে প্রধানমন্ত্রী রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে : প্রধানমন্ত্রী দিনের তাপমাত্রা বাড়তে পারে বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও উপনেতা আনিসুল ইসলাম রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় আসার নিশ্চয়তা না পেয়ে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে : প্রধানমন্ত্রী

এক মুহূর্ত না থেমেই রাস্তায় চলবে গাড়ি

| ২৪ বৈশাখ ১৪২২ | Thursday, May 7, 2015

সড়ক-মহাসড়কে’এক মুহূর্ত না থেমেই চলবে গাড়ি’! সিগন্যালে আটকে থাকতে হবে না ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বিষয়টি কোনো ম্যাজিক নয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন প্রকৌশলী সম্প্রতি যানজট নিরসনের এ বিশেষ কৌশল আবিষ্কার করেছেন। তার এ আবিষ্কার এরই মধ্যে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশ হয়েছে। এ পদ্ধতিতে একাধিক রাস্তার সংযোগস্থল বা ইন্টারসেকশনে কিছুটা পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে ক্রসিংয়ে কাছাকাছি সড়কের ভেতরে বিশেষ ধরনের ইউটার্ন স্থাপন করতে হবে। এতে সড়কে আর সিগন্যাল পড়বে না। ফলে সিনগ্যাল বাতি কিংবা ট্রাফিক পুলিশও লাগবে না।

নতুন এ পদ্ধতির উদ্ভাবক চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী প্রকৌশলী কামরুল হাসান সমকালকে বলেন, চালক মূলত সড়কের ইন্টারসেকশনের সিগন্যালে পড়ে গাড়ি থামাতে বাধ্য হন। যে কোনো দু’দিক থেকে সরাসরি ক্রসিং বন্ধ করে দিয়ে একটু বাড়তি জায়গা নিয়ে সড়কে ‘অভ্যন্তরীণ ইউটার্ন’ স্থাপন করে এ সিনগ্যাল পদ্ধতি এড়ানো সম্ভব। এর মাধ্যমে কমবে যানজট। নতুন এ পদ্ধতি বাস্তবায়নে অনেক টাকার প্রয়োজন নেই। এ ছাড়া ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় যে ব্যয় হয় সেটাও বেঁচে যাবে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, কীভাবে বিভিন্ন ক্রসিংয়ে গাড়ি না থেমে চলবে। উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে এ প্রশ্নের উত্তর রয়েছে। উদহারণ হিসেবে শাহবাগ ক্রসিংয়ের কথাই ধরা যাক। এ ইন্টারসেকশনের চারদিক থেকে চারটি রাস্তা শাহবাগ মোড় ক্রস (অতিক্রম) করেছে। ফলে একটি রাস্তা খোলা থাকলে ট্রাফিক পুলিশ বন্ধ রাখেন বাকি তিনটি রাস্তা। একটি রাস্তা ৫ মিনিট করে বন্ধ করা হলেও ১৫ মিনিট পর যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয় অন্য রাস্তার যাত্রীদের। এ সময়ে দীর্ঘ যানজটও লেগে যায়। নতুন পদ্ধতিতে কোনো রাস্তাই বন্ধ রাখতে হবে না। সব রাস্তা দিয়ে সারাক্ষণ গাড়ি চলতে পারবে। শাহবাগের চার রাস্তার ইন্টারসেকশনের ক্ষেত্রে সুবিধা মতো উত্তর-দক্ষিণ বা পূর্ব-পশ্চিম এর যে কোনো একটি সড়ক দিয়ে সরাসরি গাড়ি চলাচল করবে। সরাসরি চলাচল নিশ্চিত করতে নির্ধারিত সড়কে স্থায়ী ডিভাইডার স্থাপন করতে হবে। যারা সরাসরি যেতে পারবে না, তাদের জন্য প্রতিটি সড়কে ‘অভ্যন্তরীণ ইউটার্ন’ থাকবে। এটি ব্যবহার করে কাঙ্ক্ষিত দিকে যাওয়া যাবে। প্রকৌশলের ভাষায় ইন্টারসেকশন বন্ধ করা হলেও শুধু ডানে মোড় নেওয়ার সুযোগ থাকে না। তাই ইন্টারসেকশনের কাছাকাছি মূলত ডানে মোড় নেওয়ার জন্যই ‘অভ্যন্তরীণ ইউটার্ন’ ব্যবহার করা হবে।

ধরা হলো শাহবাগ মোড় দিয়ে উত্তর-দক্ষিণের (বাংলামটর-টিএসসি) সড়ক দিয়ে সরাসরি গাড়ি চলবে। ডিভাইডারের কারণে পূর্ব-পশ্চিমের (মৎস্যভবন-কাঁটাবন) গাড়ি সরাসরি চলতে পারবে না। বাংলামটর থেকে আসা গাড়ি টিএসসি গেলে সরাসরি সড়কে সোজা চলে যাবে। মৎস্যভবন যেতে চাইলে বাঁয়ে মোড় নিয়ে চলে যাবে। কিন্তু কাঁটাবন যেতে চাইলে শাহবাগ মোড় সরাসরি সড়ক অতিক্রম করে টিএসসির দিকে গিয়ে ‘অভ্যন্তরীণ ইউটার্ন’ ব্যবহার করে ডানে মোড় নিয়ে যেতে হবে। একইভাবে টিএসসি থেকে আসা গাড়ি বাংলামটরে সরাসরি, কাঁটাবনে বাঁয়ে মোড় নিয়ে এবং মৎস্যভবনের দিকে যেতে চাইলে শাহবাগ ইন্টারসেকশন অতিক্রম করে কিছুটা বাংলা মটরের দিকে গিয়ে ‘অভ্যন্তরীণ ইউটার্ন’ নিয়ে ডানে ঘুরে যেতে হবে। আর সরাসরি যেতে না পারায় পূর্ব-পশ্চিমের (মৎস্যভবন-কাঁটাবন) গাড়ি যার যার সড়কে বাঁয়ে মোড় নিয়ে উত্তর-দক্ষিণের সরাসরি সড়কে প্রবেশ করে ইউটার্ন ব্যবহার করে গাড়ি ঘোরাতে পারবেন। যেমন মৎস্যভবন থেকে আসা গাড়ি বাঁয়ে মোড় নিয়ে টিএসসির দিকে ইউটার্নের মাধ্যমে ঘুরে সরাসরি রাস্তার বাঁয়ের লেনে ঢুকে কাঁটাবন ও সোজা গিয়ে বাংলামটরের দিকে যেতে পারবে। একইভাবে কাঁটাবনের গাড়ি বাঁয়ের লেনে ঢুকে ইউটার্ন দিয়ে ঘুরে টিএসসি বা মৎস্যভবনের দিকে যেতে পারবে।

প্রকৌশলী কামরুল হাসানের মতে, তিন সড়কের ইন্টারসেকশনে এ পদ্ধতি অবলম্বন করা আরও সহজ হবে। এ পদ্ধতিতে শুধু ঢাকা শহর নয়, যে কোনো এলাকার যানজট নিরসন করা সম্ভব। সড়কের ভেতরে ইউটার্ন সড়কের জন্য শুধু কিছুটা বাড়তি জায়গা প্রয়োজন হবে। সরকার চাইলে এটি ব্যবস্থা করা কঠিন কিছু নয়।যানজট নিরসনে প্রকৌলশী কামরুল হাসানের উদ্ভাবিত এ পদ্ধতিটি ‘রিলিজ ফ্রম ট্রাফিক জ্যাম :নো ভিহিকেল হেজ টু স্টপ ফর এ সেকেন্ড’ শিরোনামে ফ্রান্সের ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ’ তাদের চলতি বছরের আগস্ট সংখ্যায় ছেপেছে। এর আগে এটি ছাপা হয়েছে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের জার্নালে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের (টিইসি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতিটি দেখে বলেন, সিগন্যালিং ব্যবস্থা এড়ানো গেলে যানজট কমে যাবে। এ পদ্ধতিতে সে কাজটিই করা হয়েছে। এটি আরও ভালোভাবে বিশ্লেষণ করে দেখা যেতে পারে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (টেকনিক্যাল সার্ভিসিং উয়িং) হাবিবুল হক যানজট নিরসনের এ পদ্ধতিটি দেখে বলেন, শহরাঞ্চলেও জায়গা পাওয়া গেলে এটি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। তবে মহাসড়কের জন্য এটি প্রয়োগ করা কতটা সম্ভব, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে।প্রকৌশলী কামরুল হাসানের নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ১০০ ফুট প্রস্থের রাস্তায় অভ্যন্তরীণ ইউটার্নের জন্য ওই স্থানে রাস্তার দু’পাশে বাড়তি ১৮ ফুট করে ৩৬ ফুট জায়গা লাগবে। অবশ্য ঢাকা শহরের ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) বাস্তবায়নের জন্য রাস্তার দু’পাশে এর চেয়ে বেশি পরিমাণ জায়গা রাখার কথা বলা হয়েছে।একাধিক প্রকৌশলী জানিয়েছেন, ১০ বছরে বিশেষজ্ঞ নন, এমন ৫ জন নাগরিক যানজট নিরসনে আলাদা তত্ত্ব দিয়েছেন। কয়েক বছর আগে ট্যাক্সিচালক মোহাম্মদ আলীর যানজট নিরসন পদ্ধতি প্রয়োগ করে সুফলও পাওয়া গেছে। কিন্তু স্থায়ীভাবে যানজট নিরসনে কোনো পদ্ধতিই কাজে লাগাতে পারেনি সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো।

প্রকৌশলী কামরুল হাসানের যানজট নিরসনের এ পদ্ধতিটি নিয়ে এরই মধ্যে বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে আলোচনা হয়েছে। বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও সড়ক যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক সমকালকে বলেন, অভ্যন্তরীণ ইউটার্নের ধারণাটির ভিডিওচিত্র তিনি দেখেছেন। তাত্তি্বক দিক থেকে এটি সম্পূর্ণ নতুন নয়। তবে এর কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীর শ্যামলী ইন্টারসেকশনটি বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে আগারগাঁও থেকে আসা গাড়ি শিশুমেলা ক্রসিং অতিক্রম করতে পারে না। গাড়িগুলো কলেজগেটের দিকে সামনে এগিয়ে ইউটার্ন নেয়। এতে যানজট কমেছে। উদ্ভাবিত পদ্ধতির সঙ্গে এ ব্যবস্থাটির মিল রয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সমন্বিত উদ্যোগ নিলে এ পদ্ধতিও বাস্তবায়ন করা সম্ভব। কিন্তু সরকারি সংস্থাগুলোর সে ধরনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।এক হিসাবে দেখা গেছে, যানজটের কারণে বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এ-সংক্রান্ত পরিবেশ দূষণের কারণে কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়ছে না জিডিপি। সেই সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান কর্মঘণ্টা। যানজটে পুড়ছে ব্যয়বহুল জ্বালানি তেল।

এ পরিস্থিতিতে যানজট নিরসনের এই নতুন পদ্ধতি নিয়ে কথা হয় যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে। তিনি সমকালকে বলেন, যানজট নিরসনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন তিনি। তাই নতুন পদ্ধতিটি যত দ্রুত সম্ভব পর্যালোচনা করে দেখবেন তিনি। সূত্র-সমকাল

আরও পড়ুন...