ঢাকা, মার্চ ২৯, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, স্থানীয় সময়: ১৫:৪৮:০৫

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

গাজা যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে রমজানে মুসলমানদের আল আকসায় নামাজ পড়ার অনুমতি দিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ গাজায় তুমুল যুদ্ধ ॥ চলছে যুদ্ধবিরতির বৈঠক জর্ডানে মার্কিন সৈন্য হত্যা ॥ দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার অঙ্গীকার যুক্তরাষ্ট্রের গাজা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে জাতিসংঘ দূতদের সাক্ষাত জি৭ নেতাদের ভিডিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী না হলে বাইডেন ও অনিশ্চিত গাজায় ইসরাইলের জোর হামলায় ৫৫ জন নিহত : হামাস হিজবুল্লাহ ‘লেবাননকে যুদ্ধে টেনে নিয়ে যাচ্ছে’: ইসরায়েল সামরিক বাহিনী গাজায় ৪ লাখ ২৩ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত: জাতিসংঘ

ইতিপূর্বে সম্মত খসড়ায় তিস্তা চুক্তি চায় ঢাকামোদি-মমতা বৈঠক কাল

| ২৪ ফাল্গুন ১৪২১ | Sunday, March 8, 2015

 

২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য যে খসড়ায় উভয় দেশ সম্মত হয়েছিল, সেই অনুযায়ীই চুক্তি চায় ঢাকা। বাংলাদেশের প্রত্যাশা, শিগগিরই ওই চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। গত মাসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশ সফরকালে বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা হলে তিস্তা চুক্তিতে তাঁর আপত্তি নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনি বলেছেন, তিস্তা চুক্তির জন্য কিছু কারিগরি বিষয় আছে, যেগুলো তিস্তার পানির ওপর নির্ভরশীল উভয় পক্ষের জনগোষ্ঠীর স্বার্থ ও কল্যাণ সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সমাধান হওয়া জরুরি। ওই সফরের পর পশ্চিমবঙ্গে ফিরে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এ ব্যাপারে চিঠি দিয়েছেন। আগামীকাল সোমবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে তিস্তাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় দৃশ্যত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতেই তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। এর আগে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সচিব পর্যায়ের বৈঠকে চুক্তির খসড়া ঠিক করা হয়েছিল। ওই খসড়া অনুযায়ী বাংলাদেশ যে পরিমাণ পানি পাবে বলে ঠিক হয়েছিল, তাতে পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ রক্ষা হয় না বলে মমতা বলেছিলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে দুই দেশ কখনো প্রস্তাবিত ওই চুক্তির আওতায় তিস্তার পানির হিস্যার ভাগাভাগি কেমন হবে তা প্রকাশ না করলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছিল, সমান সমান ভাগ হওয়ার কথা ছিল তিস্তার প্রবাহ। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, ২০১১ সালে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিস্তার পানি নিয়ে নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রকে দিয়ে একটি সমীক্ষাও চালিয়েছিলেন। কল্যাণ রুদ্র তাঁর প্রতিবেদন জমা দিলেও তাতে কী আছে তা প্রকাশ করেননি মমতা। কূটনৈতিক সূত্রগুলো আরো জানায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে রাজি থাকার কথা প্রকাশ্যে বললেও তাঁর রাজ্যের স্বার্থের বিষয়টি জুড়ে দিয়েছেন। ভারত তিস্তা থেকে কী পরিমাণ পানি পেলে তাঁর রাজ্যের স্বার্থ ঠিক থাকবে বলে তিনি মনে করবেন তা-ও স্পষ্ট নয়। ২০১১ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্যের দেনা মওকুফের অনুরোধ জানিয়ে সাড়া না পাওয়ার পর তিস্তা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন তিনি। আগামীকাল নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকেও তিস্তার বাইরে রাজ্যের দেনা মওকুফসহ আরো অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা রয়েছে। এ ছাড়া স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়িত হলে বর্তমানে ছিটমহল হিসেবে থাকা স্থানগুলোর উন্নয়নে আর্থিক প্যাকেজও আলোচনায় স্থান পাওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ। আগামী ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে তাঁর সফরের সম্ভাবনা বিভিন্ন মহল থেকে বলা হলেও ভারতীয় সূত্রগুলো বলছে, এ ধরনের সম্ভাবনা আপাতত তারা দেখছে না। তবে দ্রুতই তিনি বাংলাদেশ সফরে আসতে চান। গত ২ মার্চ ভারতের পররাষ্ট্রসচিব ড. এস জয়শঙ্কর বাংলাদেশ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চিঠি হস্তান্তর করেন। সেখানে নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, তিনি শিগগিরই বাংলাদেশ সফরের অপেক্ষায় আছেন। এর আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোনে নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, তিনি শিগগিরই সুখবর নিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসবেন। কূটনৈতিক সূত্রগুলো ধারণা করছে, ওই সুখবর হতে পারে স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন এবং তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর- এ দুটির কোনো একটির ইতিবাচক সমাধান। স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ভারতকে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। ভারতের লোকসভার চলতি বাজেট অধিবেশনেই সংবিধান সংশোধন বিল নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। জানা গেছে, লোকসভার বাজেট অধিবেশন চলবে আগামী মে মাস পর্যন্ত। এই অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধে সংবিধান সংশোধন বিল নিয়ে আলোচনা হতে পারে। গত ২ মার্চ ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক বলেছেন, নরেন্দ্র মোদির সরকার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমস্যা সমাধান ও সম্পর্ক জোরদারের ওপর জোর দিচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে তিস্তা নিয়ে উদ্বেগ জানানোর কথা পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক স্বীকার করলেও ঠিক কী বিষয়ে উদ্বেগ তা স্পষ্ট করেননি তিনি। তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরিত না হওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের পর থেকে সংশ্লিষ্ট প্রায় প্রতিটি বৈঠকে তুলেছে। এদিকে তিস্তার পানিপ্রবাহ ব্যাপকভাবে কমছে। আগে গ্রীষ্মে পানিপ্রবাহ কমলেও এবার শীতেও সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। এদিকে পানিসম্পদমন্ত্রী গত শুক্রবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে বাংলাদেশ আশাবাদী। তবে কখন কীভাবে এই চুক্তি হবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। এ ধরনের চুক্তিগুলোর ক্ষেত্রে কোনো দিনক্ষণ বেঁধে দেওয়া ঠিক হবে না বলেও জানান তিনি।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের শুভেচ্ছা সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটি তার ইতিবাচক সম্পর্ক আরো এগিয়ে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন বাংলাদেশ সফরে দুই দেশের সম্পর্ককে আরো নতুন উচ্চতায় নেওয়ার রূপরেখা মিলতে পারে। সূত্র-কালেরকন্ঠ