ঢাকা, এপ্রিল ২০, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ২০:১৪:০৪

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার জন্য যা-যা করার আমরা করবো: বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় আসার নিশ্চয়তা না পেয়ে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে : প্রধানমন্ত্রী মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষের সাংস্কৃতিক সম্পৃক্ততার আহ্বান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর সংসদে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে স্বতন্ত্র সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প বাস্তবায়নে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে পিপিপি বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আগমন স্বচ্ছ নির্বাচনে সহায়ক : তথ্যমন্ত্রী

আদালতের রায় পুরোপুরি মানলে বিএনপির অস্তিত্বই থাকে না

| ৭ ফাল্গুন ১৪২১ | Thursday, February 19, 2015

আদালতের রায় পুরোপুরি মানলে বিএনপি নামের রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব থাকে না বলে জানিয়েছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, জিয়াউর রহমান সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। হাইকোর্টের রায়ে ওই ক্ষমতা দখল অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। আর অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের তৈরি সংগঠন হচ্ছে বিএনপি। তাই রায় অনুযায়ী বিএনপি রাজনৈতিক দল নয়। তবে নির্বাচন কমিশনে বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধিত। গতকাল বিকালে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি হিযবুত তাহ্‌রীরের পোস্টার ছাপিয়ে জঙ্গি কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করার অভিযোগ করে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হরতাল-অবরোধের নামে খালেদা জিয়া ও বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা, সন্ত্রাস ও মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার সঙ্গে নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহ্‌রীর, আইএসসহ (ইসলামিক স্টেট) আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর যোগসূত্র রয়েছে। এদের কর্মকাণ্ড একই সূত্রে গাঁথা। তবে ইস্যুবিহীন অন্দোলনের নামে বীভৎস্য কায়দায় এত মানুষকে খুনের দায় কোনভাবেই এড়াতে পারবেন না বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে। আইনানুযায়ী যা যা করার তাই করা হবে। তার (খালেদা জিয়া) বিচার বাংলার মাটিতেই করা হবে।

তিনি বলেন, যারা এসব নাশকতা-সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত তাদের খুঁজে বের করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করুন। প্রতিটি এলাকায় নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। যারা এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত এবং হাতেনাতে ধরা পড়েছে তাদের দ্রুত বিচারের মাধ্যমে সাজা কার্যকর করা হবে। কেউ-ই রেহাই পাবে না। তিনি বলেন, আজ সারা দেশেই জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে, নাশকতাকারীদের হাতেনাতে ধরে পুলিশের হাতে সোপর্দ করছেন। এ ধারা অব্যাহত থাকলে দ্রুতই দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসবে বলেও আশা ব্যক্ত করেন তিনি। এ কে এম শামীম ওসমানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কুকুর কামড় দিলে আমরা কুকুরকে কামড় দিতে পারি না। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর জেনারেল জিয়া সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে হাজার হাজার সেনাবাহিনীর অফিসার ও সৈনিককে হত্যা করেছে। উচ্চ আদালতও জিয়ার ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। হাইকোর্টের ওই রায় অনুয়ায়ী অবৈধ ব্যক্তির হাতে জন্ম নেয়া বিএনপির অস্তিত্বই থাকে না। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ’৯১ সালে ক্ষমতায় এসে প্রথমে জাতীয় পার্টি, ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। এবার সব পদ হারিয়ে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে জনগণের ওপর আক্রমণ শুরু করেছেন। বিএনপি নেত্রীর যত ক্ষোভই যেন দেশের খেটে-খাওয়া নিরীহ মানুষের ওপর। সে জন্যই তিনি মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করছেন।
গোলাম দস্তগীর গাজীর প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, সন্ত্রাস দমন আইন, দ্রুত বিচার আইনসহ দেশে অনেক আইন যাতে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রয়েছে। দেশের অনেক স্থানেই নাশকতাকারী-সন্ত্রাসীরা ধরা পড়েছে, স্বীকারোক্তি দিয়েছে কাদের নির্দেশে তারা এসব জঘন্য কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে। তাই জড়িতদের দ্রুত বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কোন এলাকায় কে নাশকতা কর্মকাণ্ড করছে তা জনগণ একটু চেষ্টা করলেই জানতে পারবেন, খুঁজে বের করতে পারবেন। দেশবাসী তথ্য দিলে পুরস্কৃত করারও ব্যবস্থা রয়েছে। যারা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করছে, দেশের সম্পদ ধ্বংস করছে দেশের প্রচলিত আইনেই তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে বিএনপি-জামায়াত ২০ দলীয় জোট ইস্যুবিহীন অবরোধ ও হরতালের নামে বিশৃঙ্খলা ও অরাজক পরিস্থিতির অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। তাদের জঙ্গি ও বর্বরোচিত কর্মকাণ্ডের ফলে ১৫ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮৭ জন মৃত্যুবরণ করেছে, আহত সহস্রাধিক, দুই শতাধিক মানুষ পেট্রলবোমায় দগ্ধ হয়ে নারকীয় যন্ত্রণা ভোগ করছেন। এছাড়া ৬টি লঞ্চে অগ্নিসংযোগ, ২৫ দফায় ট্রেনে নাশকতা এবং বিভিন্ন ধরনের এক হাজার ৭০টি যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক অবরোধ-হরতাল সত্ত্বেও দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য চলমান রয়েছে। রপ্তানিমুখীশিল্পের কাঁচামাল আমদানি, উৎপাদন ও রপ্তানি অব্যাহত রয়েছে। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে যেখানে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৩০ দশমিক ১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, সেখানে চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসেই রপ্তানি আয় হয়েছে ১৭ দশমিক ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় শতকরা দুই ভাগেরও বেশি। সংসদ নেতা জানান, বিএনপি-জামায়াতের টানা অবরোধ-হরতালের কারণে বিদেশী অনেক ক্রেতা তাদের কার্যাদেশ বাতিল করেছেন, অনেকে তাদের অর্ডার অন্য দেশে স্থানান্তর করেছেন। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার যে বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করেছে তা বাস্তবায়িত হলে দেশের চেহারাই পাল্টে যাবে। এটা বুঝতে পেরেই আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করতেই দেশের পরিবেশকে বিএনপি নেত্রী অশান্ত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু দেশের জনগণ এখন সচেতন, বিএনপি-জামায়াতের অপকর্ম তারা বুঝতে পেরেছেন বলেই নাশকতাকারীদের হাতেনাতে ধরে পুলিশে সোপর্দ করছেন। তিনি আরও বলেন, দেশের কোথাও হরতাল-অবরোধ হচ্ছে না। যানজটসহ দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্য সবই চলছে। তাই দেশবাসী যদি প্রতিটি এলাকায় ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলে, তবে নাশকতা-সহিংসতা নির্মূল করা সহজ হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবরোধ-হরতালের দিনগুলোতে পরীক্ষানুষ্ঠানের সঙ্গে পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টিও জড়িত রয়েছে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে নির্ধারিত সময়ে এসএসসি পরীক্ষানুষ্ঠানের কোন বিকল্প নেই। তাই অবরোধ-হরতালের দিনে আগে থেকে নির্ধারিত বিষয়ের পরীক্ষাগুলো সাপ্তাহিক ছুটির দিনে (শুক্র ও শনিবার) গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, শুরুতে অবরোধের সঙ্গে অঞ্চলভিত্তিক হরতাল তারা দিয়েছে। কিন্তু ২রা ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিটি কর্মদিবসে তারা হরতাল দিয়ে যাচ্ছে। এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠানে বাধা দেয়াই এ হরতালের মূল লক্ষ্য। কোমলমতি শিশুদের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়াই বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশ্য।