২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের আয় হয়েছে সাড়ে ১২ কোটি টাকা, যা বিএনপির আয়ের ১৬ গুণ। ভোটের বছরে খরচের পরও ক্ষমতাসীন দলটির সাড়ে ৫ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত রয়েছে। অন্যদিকে ভোট বর্জনকারী বিএনপির গত বছর দল চালাতে দেড় কোটি টাকা ঘাটতিতে পড়ে। ২০১৩ সালের বার্ষিক আর্থিক লেনদেনের প্রতিবেদন রোববার নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই প্রতিবেদন জমা দিতে এক মাস সময় বাড়িয়ে নেয়ার পর শেষ দিনে তা জমা দিল দলটি। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল দলের বার্ষিক আয় ব্যয়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদন ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেছুর রহমানের কাছে হস্তান্তর করে। প্রতিনিধি দলের সদস্য ও দলের উপ দপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস সাংবাদিকদের জানান, ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের আয় হয়েছে ১২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এসময় ব্যয় হয়েছে ৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা। দশম সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি; সদস্য, নির্বাহী সংসদ, জাতীয় কমিটি, উপদেষ্টা কমিটি ও সংসদ সদস্যদের চাঁদা, মঞ্জুরি ফি ও দলীয় সাময়িকী বিক্রি, পুরাতন কাগজ বিক্রি, নেতাকর্মীদের অনুদান ইত্যাদি থেকেই এই আয় এসেছে বলে জানানো হয়েছে।
ব্যয়ের খাতে দেখানো হয়েছে- কর্মচারীদের বেতন, গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ-টেলিফোন বিল, ত্রাণ কার্যক্রম, দলীয় প্রচার-প্রচারণা, পোস্টার-ব্যানার-মাইকিং, জনসভা, নির্বাচনী ব্যয় ইত্যাদি। গত ৮ অগাস্ট বিএনপি তাদের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়। গত বছর অর্থবছরে বিএনপির ৭৬ লাখ ৫ হাজার ৭৬২ টাকা আয়ের বিপরীতে ব্যয় হয় ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ২৭ লাখ ২৫ হাজার ৩২৬ টাকা। আগের বছরের উদ্বৃত্ত থেকে ঘাটতি পূরণ করা হয় বলে প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন চালু হওয়ার পর আইনি বাধ্যবাধকতায় প্রতিবছর আর্থিক লেনদেনের প্রতিবেদন দিয়ে আসছে দলগুলো। আওয়ামী লীগ গত ৫ বছর আয়-ব্যয়ের খাত বললেও কখনো পরিমাণের তথ্য গণমাধ্যমে জানায়নি।
প্রতিবারই প্রতিবেদন জমা দিতে এসে মৃণাল কান্তি দাশ বলতেন, “এটা এখন ইসির সম্পদ। কখন, কীভাবে তা প্রকাশ করবে- সে বিষয়ে ইসিই সিদ্ধান্ত নেবে।” নির্বাচন কমিশনও রাজনৈতিক দলের সম্মতি ছাড়া পরিমাণ জানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। এবারই প্রথম তারা অর্থের পরিমাণ জানাল। আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের একজন সদস্য বলেন, “আইনি সীমাবদ্ধতা থাকায় আগে কখনো আয়-ব্যয়ের পরিমাণ জানানো হয়নি। এবার শুধু মোট অঙ্কটি জানানো হচ্ছে। খাতওয়ারি বিবরণ ইসি চাইলে প্রকাশ করতে পারে।”
আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ এক ডজন দলের আবেদনে ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত সময় বাড়ায় ইসি। বিএনপিবিহীন সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি গত বছর দেড় কোটি টাকা উদ্বৃত্ত দেখিয়েছে। ২০১৩ সালে দলটি আয় করেছে ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ৪২৯ টাকা, এর বিপরীতে তাদের ব্যয় ২ কোটি ৮২ লাখ ২১ হাজার ৫২৯ টাকা। ইসি কর্মকর্তারা জানান, এবার ৪০টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে গণফ্রন্টের এ বছর হিসাব না পাওয়ার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে দলটিকে জানিয়ে দেয়া হবে। পরপর তিন বছর ব্যর্থ হলে নিবন্ধন বাতিলের কথাও জানানো হবে।
এছাড়া এলডিপি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ, ইসলামী ঐক্যজোট, কল্যাণ পার্টি ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগের অডিট রিপোর্টের সব পাতায় স্বাক্ষর না থাকায় তা সংশোধন করে দিতে সময় বেঁধে দেবে ইসি। নিবন্ধিত ৪০টি দলের মধ্যে রোববার দুপুর পর্যন্ত ৫টি দলের হিসাব পৌঁছেনি বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা। তবে বিকাল পর্যন্ত ডাকযোগে ও সরাসরি হিসাব দেয়ার সময় ছিল। নিবন্ধিত অন্য দলগুলো নির্ধারিত সময়েই তাদের হিসাব বিবরণী জমা দেয়।