ঢাকা, মার্চ ২৯, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, স্থানীয় সময়: ১৩:০৩:০৭

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

গাজা যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে রমজানে মুসলমানদের আল আকসায় নামাজ পড়ার অনুমতি দিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ গাজায় তুমুল যুদ্ধ ॥ চলছে যুদ্ধবিরতির বৈঠক জর্ডানে মার্কিন সৈন্য হত্যা ॥ দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার অঙ্গীকার যুক্তরাষ্ট্রের গাজা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে জাতিসংঘ দূতদের সাক্ষাত জি৭ নেতাদের ভিডিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী না হলে বাইডেন ও অনিশ্চিত গাজায় ইসরাইলের জোর হামলায় ৫৫ জন নিহত : হামাস হিজবুল্লাহ ‘লেবাননকে যুদ্ধে টেনে নিয়ে যাচ্ছে’: ইসরায়েল সামরিক বাহিনী গাজায় ৪ লাখ ২৩ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত: জাতিসংঘ

আইএসকে হটাতে পারবেন ওবামা?

| ১৪ ভাদ্র ১৪২১ | Friday, August 29, 2014

সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়াটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এর ফলে ওবামার যুদ্ধকৌশল বড় ধরনের পরীক্ষার মুখে পড়বে। ওবামার কৌশল হচ্ছে, সীমিত পর্যায়ে প্রাণঘাতী ও বিধ্বংসী হামলা চালানো, তবে স্থলযুদ্ধে না জড়ানো। প্রশ্ন উঠেছে ওবামার এই নীতি কি সিরিয়ায় আইএসকে পুরোপুরি দমন করতে পারবে?
ইরাকে মার্কিন সেনা কর্মকর্তাদের পাঠানো, পাকিস্তান ও ইয়েমেনে আল কায়দা জঙ্গিদের গুঁড়িয়ে দিতে মার্কিন ড্রোন হামলা, লিবিয়া ও সোমালিয়ায় চলমান সহিংসতায় সন্ত্রাসী বলে সন্দেহভাজনদের পিছু ধাওয়া করতে সামরিক অস্ত্রসজ্জিত করে বিশেষ বাহিনী নিয়োগের মধ্যেও ওবামার ওই নীতির প্রতিফলন ঘটে। তবে নতুন ‘ইসলামী খেলাফত’ ঘোষণাকারী আইএসকে নির্মূলে ওবামা নীতি পরীক্ষার মুখে পড়বে বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ ওবামা স্থলবাহিনীকে দেশের বাইরে নিয়োগ করতে চাচ্ছেন না।
গত মে মাসে ওয়েস্ট পয়েন্টের একটি মিলিটারি একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে ওবামা তার মার্কিন সামরিক ক্ষমতা ব্যবহারের মূল পরিকল্পনার আভাস দিয়েছিলেন। তখন ওবামা বলেছিলেন, সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া প্রতিটি দেশেই সামরিক হস্তক্ষেপ ও দখল করার নীতি বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। এর দীর্ঘর্মেয়াদি সুফল বলেও কিছু নেই। কিন্তু আইএসের তীব্র উত্থানের ফলে তার এই নীতি দ্রুতই পরীক্ষার মুখে এসে পড়ছে।
যখনই মার্কিন নাগরিক ও তার মিত্ররা মৃত্যুফাঁদে পড়ে যাবে তখনই একতরফা হামলা চালানো হবে। তখনই ড্রোন ও বিমান হামলার উপরে ওবামা জোর দেন। এবার মধ্যপ্রাচ্যে আইএস বিদ্রোহীদের হটাতে স্থানীয় মিত্রদের পাশে টানতে চাইছেন ওবামা। চাইছেন আন্তর্জাতিক মহল সামরিক দায়-দায়িত্ব নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিক। কিন্তু তেমন একটা সাড়া পাচ্ছেন না তিনি।
ইরাকের সুনি্ন আইএস বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালিয়ে সফলতা পাবেন বলে ওবামা এখনও বিশ্বাস রাখলেও এ নিয়ে বেশ সংশয়ে রয়েছে মার্কিন প্রশাসন। সিরিয়ার বিষয়টিতো দূর অস্ত।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জোশ আর্নেস্ট জানান, ‘আমরা গত দশ বছরের মার্কিন নেতৃত্বে সামরিক হামলা যে কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয় তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। কিন্তু ইরাকে আইএসের চোখ ধাঁধানো উত্থানের কারণে স্থানীয় মিত্রদের উপরেও মার্কিনিদের ভরসা রাখা আর সম্ভব নয়। কুর্দি পেশ মার্গা যেমন যথেষ্ট শক্তিশালী নয়, তেমনি মার্কিন প্রশিক্ষণে ও অর্থে গড়ে তোলা ইরাকি বাহিনীও হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। এমনকি আইএস নির্মূলে বিভিন্ন গোষ্ঠীর ‘সমন্বিত’ বাগদাদ সরকারের বিকল্প নেই বলা হলেও, নুরি আল মালিকির সরে যাওয়ার পর এখনও সেই ধরনের সরকার গঠন সুদূর বলেই মনে হচ্ছে।
সিরিয়ার উদারপন্থি বিদ্রোহীদের মার্কিনিরা অস্ত্র সহায়তা করলেও আইএসবিরোধী বাহিনীকে ঠিকই দুর্বল করে রেখেছে। আর আইএসকে নির্মূলে একটি শক্তিশালী মিত্র স্বয়ং আসাদ সরকার। ওবামা বরাবরই আসাদকে যুদ্ধাপরাধী বলে অভিযোগ করে আসছেন। তার পক্ষে আসাদের পাশে দাঁড়ানো কঠিন।
বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস প্রফেসর এন্ড্রিও ভাসেভিচ বলেন, যারা মনে করে মার্কিন সেনাবাহিনী যেমন ভেঙেচুরে গুঁড়িয়ে দিতে পারে, তেমনি তাকে পুনরায় জোড়াতালি দিয়ে গড়েও তুলতে পারে, তারা ভুল করছে। সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক হামলা এক গভীর অন্ধকারের ভেতর সবাইকে ঠেলে দিতে পারে বলে মনে করেন তিনি। তাছাড়া মার্কিন বাহিনীর আফগানিস্তান এবং ইরাক সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিবহাল হলেও সিরিয়া সম্পর্কে তাদের জ্ঞান খুবই সীমিত। এর ফলে আইএসের আস্তানা শনাক্ত করে নির্ভুল হামলা চালানো তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। তাই গত মঙ্গলবারে যখন ওবামা বললেন, আইএস একটা ‘ক্যান্সার’। এদের ‘দ্রুত’ নির্মূলের আশা করা ভুল_ তাও বিচিত্র কিছু নয়। এদিকে মার্কিন সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ জেনারেল মার্টিন ডেম্পসে মনে করেন, আইএসকে হটানো সম্ভব যদি ইরাক ও সিরিয়ায় একযোগে তীব্র হামলা চালানো হয়। আসাদবিরোধী ফ্রি সিরিয়ান আর্মিকেও এ কাজে লাগাতে হবে। এ জন্য তাদের সামরিক অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সুজ্জিত করতে হবে। এদিকে নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের মধ্যে তেমন একটা বনিবনা হচ্ছে না বলেই মনে হয়। সিরিয়ায় মার্কিন বিমান হামলার সমর্থক রিপাবলিকান সিনেটর জন ম্যাককেইন অভিযোগ করেন, ওবামা এ যুদ্ধের নেতৃত্ব দিতে রাজি নন। সম্প্রতি সিরিয়া সম্পর্কে ওবামা কবে সিদ্ধান্ত নেবেন তা জিজ্ঞাসা করলে হোয়াইট হাউস চুপ থাকে। আগামী সপ্তাহে ইউরোপ সফর শেষে হয়তো জানা যাবে ওবামা কী চাচ্ছেন।
এএফপি অবলম্বনে