ঢাকা, মার্চ ২৮, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, স্থানীয় সময়: ২১:২০:১৪

এ পাতার অন্যান্য সংবাদ

গাজা যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে রমজানে মুসলমানদের আল আকসায় নামাজ পড়ার অনুমতি দিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ গাজায় তুমুল যুদ্ধ ॥ চলছে যুদ্ধবিরতির বৈঠক জর্ডানে মার্কিন সৈন্য হত্যা ॥ দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার অঙ্গীকার যুক্তরাষ্ট্রের গাজা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে জাতিসংঘ দূতদের সাক্ষাত জি৭ নেতাদের ভিডিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী না হলে বাইডেন ও অনিশ্চিত গাজায় ইসরাইলের জোর হামলায় ৫৫ জন নিহত : হামাস হিজবুল্লাহ ‘লেবাননকে যুদ্ধে টেনে নিয়ে যাচ্ছে’: ইসরায়েল সামরিক বাহিনী গাজায় ৪ লাখ ২৩ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত: জাতিসংঘ

অং সান সু চি বালিতে মাথা গুঁজে আছেন : অ্যামনেস্টি

| ৪ আশ্বিন ১৪২৪ | Tuesday, September 19, 2017

লন্ডন : আনন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি ও তার সরকার রাখাইন রাজ্যের ভয়াবহ রোহিঙ্গা পরিস্থিতির বিষয়ে বালিতে তাদের মাথা গুঁজে রেখেছেন বলে সমালোচনা করেছেন। খবর এএফপি’র।
লন্ডন-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক জেমস গোমেজ মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি জাতির উদ্দেশ্যে যে ভাষণ দিয়েছেন তাতে বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
অন্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও সু চির বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
গোমেজ বলেন, ‘অং সান সু চি তার বক্তব্যের মাধ্যমে আবারও দেখিয়েছেন যে, তিনি ও তার সরকার রাখাইন রাজ্যের ভয়াবহ পরিস্থিতির বিষয়ে বালিতে তাদের মাথা গুঁজে রেখেছেন।’
রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়ে চুপ থাকায় বিশ্বজুড়ে তীব্র সমালোচনা ও নিন্দার মধ্যেই আজ মঙ্গলবার এই প্রথম মুখ খোলেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এই নেত্রী।
অং সান সু চি’র ভাষণ নিয়ে অনেকের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও, তার ভাষণে কিছু কথা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অনেকে অভিযোগ করছেন, মিজ সু চি বাস্তবতা এড়িয়ে গেছেন।
টেলিভিশনে প্রচারিত ভাষণে অং সান সু চি বলেছেন, চার লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান কেন বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে, সে সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। তার সরকারকে এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে।
জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যখন বলছে যে রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ‘জাতিগতভাবে নির্মূল’ করা হচ্ছে, তখন রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়া নিয়ে মিজ সু চি অবগত না থাকার কথা বেশ হতবাক করেছে।
মিয়ানমারের নেত্রী বলেন, অধিকাংশ মুসলিম পালিয়ে যায়নি এবং সহিংসতা বন্ধ হয়ে গেছে।
এ সংঘাতের কারণে দুর্দশাগ্রস্ত ‘সকল মানুষের’ প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন মিজ সু চি।
মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করে না। তারা রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি মুসলিম’ হিসেবে বর্ণনা করে। মিজ সু চি তার বক্তব্যে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করেননি।
বক্তৃতার সময় মিজ সু চি মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং আইন বহির্ভূত কাজের নিন্দা করেন। কিন্তু সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে তিনি কিছু বলেননি।
সু চি বলেছেন, অধিকাংশ মুসলিম রাখাইন অঞ্চলে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এতে বোঝা যায় সেখানে পরিস্থিতি খুব মারাত্মক নয়।
মিস সু চি বলেন, মুসলিমদের সাথে কথা বলে রাখাইনের সংকট সম্পর্কে জানতে চান।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাখাইনে বসবাসরত মুসলিমদের জীবন মান উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং অবকাঠামো উন্নয়নের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে মিজ সু চি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশে অবস্থানরত শরণার্থীরা তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবে বলে তিনি জানান।
রাখাইন অঞ্চলে সেনাবাহিনীর নিপীড়ন নিয়ে কিছু না বলায় মিজ সু চি’র সমালোচনা হচ্ছে।
মিজ সু চি তার ভাষণে বলেছেন, সেপ্টেম্বর মাসের পাঁচ তারিখের পর থেকে রাখাইনে কোন অভিযান চালানো হয়নি। কিন্তু এ বিষয়টি সত্য নয়।
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের উপ-পরিচালক ফিল রবার্টসন মিজ সু চি’র কিছু বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তিনি বলেন, ‘৫ই সেপ্টেম্বরের পর থেকে যদি রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর অভিযান বন্ধ হয়ে যাওয়ার বক্তব্য সত্য হয়, তাহলে গত দু’সপ্তাহে আমরা সেখানে যেসব গ্রাম পুড়ে যেতে দেখেছি, সেগুলোতে কারা আগুন দিচ্ছে?’
জাতিসংঘের একটি সংস্থা ইউনিসেফের একজন কর্মকর্তা পল এডওয়ার্ডস মিজ সু চি’র বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আমাদের কেউই আসলে জানি না রাখাইনে কী ঘটছে। কারণ আমরা সেখানে যেতে পারছি না।’
মাত্র তিন সপ্তাহে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে জাতিগত নিধন হিসেবে উল্লেখ করে সংঘের প্রধান এই অভিযান বন্ধে অং সান সু চি’র হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন। ফলে মিজ সু চি আজ কি বলেন সেদিকে সবারই তীব্র আগ্রহ ছিলো।
অং সান সু চি’র এই ভাষণের পরপরই জাতিসংঘ মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে তাদের কর্মকর্তাদেরকে মিয়ানমারে গিয়ে অবাধে ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়ার দাবি জানিয়েছে।
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলছেন, সেখানে আসলেই কী ঘটছে, সেটা তাদের কর্মকর্তারা ‘নিজের চোখে’ দেখতে চান।
এর আগে গত মার্চ মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছিলো। কিন্তু মিয়ানমার সরকার তদন্তকারীদেরকে সেদেশে যেতে দেয়নি।
মিজ সু চি’র ভাষণের পর জাতিসংঘের তরফে আবারও এই একই দাবি জানানো হয়েছে।
রাখাইন রাজ্য সরকারের সেক্রেটারি তিন মং সোয়ে মিজ সু চি’র ভাষণকে অত্যন্ত ‘স্বচ্ছ’ উল্লেখ করে এর প্রশংসা করেছেন। তবে রাখাইনে মুসলমান ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তিনি যেসব অঙ্গীকার করেছেন সে ব্যাপারে তিনি খুব একটা আশাবাদী নন।
‘পরিস্থিতি বিস্ফোরণের জন্যে তৈরি। এর জন্যে শুধু একটু স্ফুলিঙ্গ প্রয়োজন।’
তবে চীন ও রাশিয়ার কূটনীতিকরা মিয়ানমারের ডি ফেক্টো নেত্রী অং সান সু চি’র ভাষণকে স্বাগত জানিয়েছেন।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে এই দুটো দেশের অবস্থান শুরু থেকে মিয়ানমারের পক্ষে। এবারও মিজ সু চির ভাষণের ব্যাপারে দেশ-দুটোর কূটনীতিকদের সুর একই দেখা গেলো।
মিয়ানমারে চীনা রাষ্ট্রদূত হং লিয়াং বলেছেন, ‘চীনের অবস্থান খুব পরিষ্কার। রাখাইনে শান্তি ও স্থিতি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে মিয়ানমার সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে আমরা তাকে সমর্থন করছি।’
রাশিয়ার কূটনীতিকরাও মিজ সু চি’র বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন। মিয়ানমারে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত নিকোলাই এ লিস্তোপাদভ বলেছেন, ‘রাখাইনে জাতিগত নিধন অভিযান, গণহত্যা- এসবের নিন্দা জানানোর মতো কোন বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই।’